আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চারজন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে বিচারক এবং প্রসিকিউটররাও রয়েছেন। এই পদক্ষেপটি আইসিসি কর্তৃক মার্কিন ও ইসরায়েলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্তের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে, যা দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
মঙ্গলবার (আগস্ট ২০, ২০২৫) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা করেন যে, আইসিসির দুই বিচারক এবং দুই প্রসিকিউটরকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন ফ্রান্সের বিচারক নিকোলাস ইয়ান গুইলু, কানাডার বিচারক কিম্বার্লি প্রোস্ট, ফিজির প্রসিকিউটর নাজাত শামিম খান এবং সেনেগালের প্রসিকিউটর মামে মানদিয়াই নিয়ং। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সকল সম্পদ জব্দ করা হবে এবং মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থায় তাদের লেনদেন সীমিত করা হবে।
মার্কিন প্রশাসনের মতে, আইসিসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে "অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন" পদক্ষেপ নিয়েছে। রুবিও বলেন, "এই আদালতটি একটি জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনগত যুদ্ধের একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।" তিনি আরও বলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির এই ধরনের "অবৈধ এবং ভিত্তিহীন" পদক্ষেপ থেকে তাদের সৈন্য, সার্বভৌমত্ব এবং মিত্রদের রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এই নিষেধাজ্ঞাগুলি আইসিসির তদন্তের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য মার্কিন প্রশাসনের সর্বশেষ পদক্ষেপ। এর আগে, নভেম্বরে ২০২৪ সালে আইসিসি গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালাণ্ট এবং হামাস নেতা ইব্রাহিম আল-মাসরির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। এটি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইসিসি কর্মকর্তাদের উপর দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞা। এর আগে জুন ২০২৫-এও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা মনে করে, এই নিষেধাজ্ঞা বিচারিক স্বাধীনতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের শাসনের উপর আঘাত। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলি "আদালত এবং রোম চুক্তির ১২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের উপর একটি আক্রমণ" এবং এটি "বিচারিক স্বাধীনতার নীতির পরিপন্থী"।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল উভয়ই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকার নিয়ে চলমান বিতর্কের একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।