১৫ই আগস্ট, ২০২৫ তারিখে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। তবে নারীদের অধিকারের উপর কঠোর বিধিনিষেধ, চলমান বিক্ষোভ এবং লিঙ্গভিত্তিক নিপীড়নের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা জারির ঘটনা এই অনুষ্ঠানগুলোকে ম্লান করে দিয়েছে। কাবুলে সরকারিভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুরুষদের উপস্থিতি ছিল, যেখানে হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছড়ানো হয় এবং তালেবান নেতারা বক্তব্য রাখেন। কিন্তু নারীদের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ২০০১ সাল থেকে তালেবান আফগানিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করার পর থেকে নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং জনজীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে পদ্ধতিগতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির পর মেয়েদের শিক্ষা এবং অনেক পেশায় নারীদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা জনগণকে ইসলামিক শাসনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলেছেন এবং মন্ত্রীদের তাদের পদবি থেকে 'অ্যাক্টিং' শব্দটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
নারীদের অধিকারের উপর তালেবানের কঠোর নীতিমালার প্রতিবাদে আফগান নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলো তাকহার প্রদেশে এবং পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বিক্ষোভ করেছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তালেবানের এই নীতিগুলোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, জুলাই ২০২৫-এ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং প্রধান বিচারপতি আব্দুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে লিঙ্গভিত্তিক নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। আইসিসি তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে। এই পরোয়ানা জারির ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তালেবান সরকারের উপর আরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো তালেবানের এই দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। তারা মনে করে, এই ধরনের পদক্ষেপ আফগানিস্তানে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়ক হবে। তালেবান সরকার অবশ্য এই পরোয়ানাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের ইসলামিক আইন অনুযায়ী শাসন অব্যাহত রাখার কথা বলেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত রিচার্ড বেনেট বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে নারী ও বালিকাদের উপর নিপীড়ন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। তিনি আরও বলেন যে, এই পরিস্থিতি আফগানিস্তানের জনগণের জন্য এবং সম্ভবত দেশের বাইরেও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবান সরকারের এই দমনমূলক শাসনকে প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা মনে করে, এই ধরনের নীতি মানবাধিকারের পরিপন্থী এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এই প্রেক্ষাপটে, আইসিসি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে তালেবান নেতাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য আশার সঞ্চার করেছে।