মহাকাশ আবহাওয়ার রহস্য উন্মোচন এবং পৃথিবীর উপর এর প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর লক্ষ্যে নাসা (NASA) এবং নোয়া (NOAA) ২০২৫ সালে তিনটি যুগান্তকারী মহাকাশ অভিযান শুরু করতে চলেছে। এই উদ্যোগগুলি সৌর কার্যকলাপের পূর্বাভাস এবং এর প্রভাবগুলি প্রশমিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।
এই অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইন্টারস্টেলার ম্যাপিং অ্যান্ড অ্যাক্সিলারেশন প্রোব (IMAP) মিশন। IMAP আমাদের সৌরজগতের চারপাশের বিশাল বুদ্বুদ, হেলোস্ফিয়ার এবং এর চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করবে। সূর্যের শক্তি এবং কণাগুলি কীভাবে এই সীমানার সাথে মিথস্ক্রিয়া করে তা অধ্যয়ন করার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা মহাজাগতিক বিকিরণ এবং পৃথিবীতে এর প্রভাব সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করার আশা করছেন। IMAP মিশনটি মহাজাগতিক রশ্মির উৎস এবং সৌর বায়ু কীভাবে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে তা বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
IMAP-এর সাথে যুক্ত থাকবে দুটি রাইডশেয়ার মিশন: কারুথার্স জিওকরোনা অবজারভেটরি (Carruthers Geocorona Observatory) এবং স্পেস ওয়েদার ফলো-অন ল্যাগ্রেঞ্জ ১ (SWFO-L1)। কারুথার্স মিশনটি পৃথিবীর বাইরের বায়ুমণ্ডলীয় স্তর, এক্সোস্ফিয়ার পর্যবেক্ষণ করবে। এটি এই অঞ্চলের ক্ষীণ অতিবেগুনী রশ্মির ছবি তুলবে, যা জিওকরোনা নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে মহাকাশ আবহাওয়া আমাদের বায়ুমণ্ডলকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। এই মিশনটি পৃথিবীর এক্সোস্ফিয়ারের উপর মহাকাশ আবহাওয়ার প্রভাব সম্পর্কে নতুন তথ্য দেবে।
SWFO-L1 মহাকাশযানটি সৌর ঝড় এবং মহাকাশ আবহাওয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম সতর্কতা প্রদান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি NOAA-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এটি তাদের প্রথম পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র যা নিরবচ্ছিন্ন, কার্যকরী মহাকাশ আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণের জন্য উৎসর্গীকৃত। SWFO-L1 সৌর বায়ু এবং করোনাল মাস ইজেকশন (CMEs) সনাক্ত করে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা সৌর ঝড়গুলির আগাম সতর্কতা হিসাবে কাজ করবে, যা গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
এই তিনটি মিশনই পৃথিবী থেকে প্রায় ১০ লক্ষ মাইল দূরে সূর্য-পৃথিবী ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট ১ (L1)-এ অবস্থান করবে, যা তাদের সৌর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করার একটি আদর্শ স্থান দেবে। এই অভিযানগুলির সম্মিলিত প্রচেষ্টা মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং প্রশমন ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে। মহাকাশ আবহাওয়া পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ গ্রিড এবং স্যাটেলাইটগুলির উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই এই মিশনগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য আমাদের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো রক্ষা করার জন্য অপরিহার্য।
এই গুরুত্বপূর্ণ অভিযানগুলির উৎক্ষেপণ মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, সকাল ৭:৩২ মিনিটে EDT-তে ফ্লোরিডার নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ (SpaceX Falcon 9) রকেটের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এই উৎক্ষেপণের আগে, নাসা বেশ কয়েকটি মিডিয়া ইভেন্টের আয়োজন করেছে। রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, দুপুর ২:৩০ মিনিটে একটি প্রি-লঞ্চ নিউজ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে, এরপর দুপুর ৩:৪৫ মিনিটে একটি বিজ্ঞান নিউজ কনফারেন্স হবে। সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, সকাল ১১:৩০ মিনিটে, মিশন বিশেষজ্ঞরা সাংবাদিকদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎকারের সুযোগ পাবেন।