২০২৫ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর, চীন মহাকাশ অন্বেষণ এবং উপগ্রহ স্থাপনে তার ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা প্রদর্শন করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এই যুগান্তকারী ঘটনাগুলি দেশের মহাকাশ কর্মসূচির অগ্রগতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর অবদানকে তুলে ধরে।
প্রথম অভিযানটি ছিল স্মার্ট ড্রাগন ৩ রকেট, যা স্থানীয় সময় সকাল ৩:৪৮ মিনিটে শানডং প্রদেশের রিশাওয়ের কাছে সমুদ্র-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি ছিল সলিড-ফুয়েল চালিত এই রকেটের সপ্তম সমুদ্রযাত্রা, যা চায়না একাডেমি অফ লঞ্চ ভেহিকেল টেকনোলজি (CALT) দ্বারা তৈরি। ৩১ মিটার লম্বা এবং ১৪০ টন ওজনের স্মার্ট ড্রাগন ৩, ৫০০ কিলোমিটার সান-সিনক্রোনাস অরবিটে ১.৫ টন পর্যন্ত পেলোড সরবরাহ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই রকেটটি Geespace দ্বারা নির্মিত ১১টি মাল্টিফাংশনাল উপগ্রহ বহন করে, যা সামুদ্রিক শিল্প, পরিবহন ব্যবস্থাপনা, আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস) পরীক্ষা এবং পরিবেশগত পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে। এই সমুদ্র-ভিত্তিক উৎক্ষেপণগুলি চীনের মহাকাশে প্রবেশাধিকারের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে এবং জনবহুল এলাকা থেকে দূরে উৎক্ষেপণ পরিচালনা করার সুবিধা প্রদান করে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস করে।
এর ছয় ঘন্টা পর, স্থানীয় সময় সকাল ১০:০০ টায়, লং মার্চ ৭এ রকেটটি হাইনান প্রদেশের ওয়েনচাং স্পেস লঞ্চ সেন্টার থেকে উৎক্ষেপিত হয়। এই মিশনটি সফলভাবে ইয়াওগান ৪৫ রিমোট-সেন্সিং উপগ্রহটিকে কক্ষপথে স্থাপন করে। সাংহাই একাডেমি অফ স্পেসফ্লাইট টেকনোলজি দ্বারা নির্মিত ইয়াওগান ৪৫ উপগ্রহটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, ভূমি জরিপ, কৃষি পর্যবেক্ষণ এবং দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। লং মার্চ ৭এ রকেটটি জিওসিনক্রোনাস ট্রান্সফার অরবিটে ৭ টন পেলোড বহন করতে সক্ষম। এই রকেটটি চীনের মহাকাশ কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা উন্নত কক্ষপথে উপগ্রহ স্থাপনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি।
এই দুটি উৎক্ষেপণ চীনের মহাকাশ প্রযুক্তির বহুমুখীতা এবং সক্ষমতার একটি স্পষ্ট প্রমাণ। স্মার্ট ড্রাগন ৩-এর মাধ্যমে সমুদ্র-ভিত্তিক উৎক্ষেপণের উপর জোর দেওয়া চীনের মহাকাশ নীতির একটি কৌশলগত দিক, যা উৎক্ষেপণের নমনীয়তা বাড়ায় এবং বিভিন্ন কক্ষপথে সহজে উপগ্রহ স্থাপনের সুযোগ তৈরি করে। অন্যদিকে, লং মার্চ ৭এ-এর মতো শক্তিশালী রকেটগুলি আরও জটিল মিশনের জন্য পথ খুলে দিচ্ছে। Geespace-এর মতো সংস্থাগুলি উপগ্রহের নক্ষত্রপুঞ্জ তৈরি করে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ, আইওটি এবং ডেটা পরিষেবার মতো ক্ষেত্রে অবদান রাখছে, যা মহাকাশ প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই অর্জনগুলি কেবল চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকেই নির্দেশ করে না, বরং বৈশ্বিক মহাকাশ অর্থনীতিতে এর ক্রমবর্ধমান প্রভাবকেও তুলে ধরে। এই মিশনগুলি বিভিন্ন সেক্টরে, যেমন পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।