আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) ১১,০০০ পাউন্ডের বেশি অত্যাবশ্যকীয় বিজ্ঞান, গবেষণা এবং সরবরাহের সরঞ্জাম নিয়ে নর্থরোপ গ্রুম্যানের সাইগনাস এক্সএল কার্গো মহাকাশযান পৌঁছেছে। এটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে আইএসএস-এ সফলভাবে পৌঁছায়। তিন দিন আগে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এই মহাকাশযানটি।
প্রাথমিকভাবে, মহাকাশযানটির পৌঁছানোর সময়সূচীতে কিছু বিলম্ব হয়েছিল। সফটওয়্যার সংক্রান্ত সমস্যার কারণে রেন্ডেভু থ্রাস্টার ফায়ারিংয়ের সময় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নর্থরোপ গ্রুম্যানের প্রকৌশলীরা মূল ইঞ্জিন ফল্ট সনাক্তকরণ সফটওয়্যারের সংবেদনশীলতা সামঞ্জস্য করে এই সমস্যার সমাধান করেন। এরপর, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে সকাল ৭:২৪ মিনিটে (ইডিটি) মহাকাশচারী জনি কিম আইএসএস-এর রোবোটিক আর্ম ব্যবহার করে সাইগনাস এক্সএল-কে সফলভাবে গ্রহণ করেন। মহাকাশযানটিকে আইএসএস-এর ইউনিটি মডিউলের পৃথিবীর দিকে মুখ করা পোর্টের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
সাইগনাস এক্সএল-এর নামকরণ করা হয়েছে ২০০৩ সালের কলাম্বিয়া বিপর্যয়ে নিহত শাটল পাইলট উইলিয়াম "উইলি" ম্যাককুল-এর স্মরণে। নর্থরোপ গ্রুম্যান মহাকাশ অগ্রদূতদের সম্মান জানানোর এই ঐতিহ্য বজায় রেখেছে।
সাইগনাস এক্সএল-এর কার্গোতে অন্তর্ভুক্ত ছিল মহাকাশে সেমিকন্ডাক্টর ক্রিস্টাল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং উন্নত ক্রায়োজেনিক ফুয়েল ট্যাঙ্কগুলির জন্য সরঞ্জাম। এছাড়াও, এতে বায়োফিল্ম বৃদ্ধি রোধ করার জন্য একটি বিশেষ ইউভি লাইট সিস্টেম এবং ক্যান্সার-এর মতো রোগের চিকিৎসার জন্য ফার্মাসিউটিক্যাল ক্রিস্টাল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত ছিল। মহাকাশে ওষুধ তৈরির এই প্রযুক্তি রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে যারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে চান তাদের জন্য। মহাকাশে ক্রিস্টাল তৈরি করলে তা পৃথিবীর তুলনায় উচ্চ মানের হয়, যা ওষুধ তৈরিতে সহায়ক।
এই সফল সরবরাহ মিশনটি আইএসএস-এর কার্যক্রম বজায় রাখতে এবং মহাকাশ-ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাণিজ্যিক মিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে। সাইগনাস এক্সএল-এর সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করে যে আইএসএস-এর ক্রুরা চলমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ পাচ্ছেন।
নর্থরোপ গ্রুম্যানের এই নতুন সাইগনাস এক্সএল পূর্ববর্তী সাইগনাস মহাকাশযানের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি কার্গো বহন করতে সক্ষম, যা প্রতি উৎক্ষেপণে বিজ্ঞান ও সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়ে খরচ কমাতে সাহায্য করে। নর্থরোপ গ্রুম্যানের এই নতুন মহাকাশযানটি প্রায় দুটি অ্যাপোলো কমান্ড মডিউলের সমান। মহাকাশে সেমিকন্ডাক্টর ক্রিস্টাল তৈরির গবেষণা অনেক বছর ধরে চলছে, যা পৃথিবীর তুলনায় ত্রুটিমুক্ত ক্রিস্টাল তৈরিতে সহায়ক। মহাকাশে ওষুধ তৈরির এই প্রচেষ্টা রোগীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।