নাসার ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ ২০২৭ সালের মে মাসের মধ্যে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তবে এটি এর আগেও, সম্ভবত ২০২৬ সালের শরৎকালেই মহাকাশে পাঠানো হতে পারে। [১] এই মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গ্যালাকটিক প্লেন সার্ভে, যার মাধ্যমে প্রায় ২০ বিলিয়ন নক্ষত্রের একটি বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করা হবে। [১] এটি বর্তমানে ম্যাপ করা নক্ষত্রের সংখ্যার চারগুণ বেশি। [১] এই সমীক্ষাটি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির গঠন, নক্ষত্র সৃষ্টির প্রক্রিয়া এবং সৌরজগতের উৎপত্তির বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে। [১৭]
নক্ষত্রদের মধ্যবর্তী গ্যাস ও ধূলিকণা, যা আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম নামে পরিচিত, তা নক্ষত্র ও গ্রহ সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। [১৭] এই মাধ্যমটি অধ্যয়ন করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নতুন মহাজাগতিক বস্তু সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন। [১৭] রোমান টেলিস্কোপের গ্যালাকটিক প্লেন সার্ভে বিশেষভাবে এই বিষয়গুলো অন্বেষণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। [১৭] টেলিস্কোপটির ওয়াইড-ফিল্ড ইন্সট্রুমেন্ট, যা এর প্রধান যন্ত্র, হাবলের ইনফ্রারেড যন্ত্রের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি বিস্তৃত এলাকার ছবি তুলতে সক্ষম হবে। [৫]
রোমান স্পেস টেলিস্কোপের ব্যবস্থাপনা নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, মেরিল্যান্ডে অবস্থিত। [১] এছাড়াও, নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি, ক্যালিফোর্নিয়ার সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যালটেক/আইপ্যাক, বাল্টিমোরের স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউট এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা এই মিশনে অবদান রাখছেন। [১, ১৭] মূল শিল্প অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে বিএই সিস্টেমস ইনকর্পোরেটেড, এলথ্রিহ্যারিস টেকনোলজিস এবং টেলেডাইন সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইমেজিং। [১] এলথ্রিহ্যারিস টেকনোলজিস রোমান স্পেস টেলিস্কোপের অপটিক্যাল টেলিস্কোপ অ্যাসেম্বলি (OTA) সরবরাহ করেছে, যা এর গুরুত্বপূর্ণ "চোখ" হিসেবে কাজ করে। [২, ৩] বিএই সিস্টেমস ওয়াইড-ফিল্ড ইন্সট্রুমেন্ট (WFI) সফলভাবে নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে পাঠিয়েছে, যা এর একীকরণ এবং পরীক্ষার সমাপ্তি নির্দেশ করে। [১২] টেলেডাইন রোমান স্পেস টেলিস্কোপের জন্য উচ্চ-কার্যকারিতা সম্পন্ন ইনফ্রারেড ডিটেক্টর সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে ১৮টি H4RG-10 সেন্সর চিপ অ্যাসেম্বলি রয়েছে, যা মোট ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি পিক্সেল নিয়ে গঠিত এবং এটি সর্বকালের বৃহত্তম ইনফ্রারেড ফোকাল প্লেন। [২১]
বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মতামত রোমান স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যার মধ্যে গ্যালাকটিক প্লেন সার্ভেও অন্তর্ভুক্ত। [১৭, ২২] ২০২৫ সালের ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটি ভার্চুয়াল কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে মতামত সংগ্রহ এবং সমীক্ষার নকশা উন্নত করার জন্য কাজ করা হয়েছে। [২২] উৎক্ষেপণের পর, রোমান স্পেস টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য রোমান রিসার্চ নেক্সাস এবং বারবারা এ. মিকুলস্কি আর্কাইভ ফর স্পেস টেলিস্কোপসের মাধ্যমে সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ করা হবে। [১, ১৭] এই উন্মুক্ত ডেটা নীতি বিশ্বজুড়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মিল্কিওয়ে এবং বৃহত্তর মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোধগম্যতা বাড়াতে বিশ্লেষণ পরিচালনা করার সুযোগ দেবে। [১]
রোমান স্পেস টেলিস্কোপের প্রাথমিক আয়নার ব্যাস ৭.৯ ফুট (২.৪ মিটার), যা হাবলের সমান, কিন্তু এর ওজন চার ভাগের এক ভাগ। [৭] এই সমীক্ষার পর্যবেক্ষণ কৌশল নির্ধারণে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মতামত নেওয়া হয়েছে। [১৭] এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করার জন্য আয়োজিত হয়েছিল, যাতে সমীক্ষার নকশা সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক ফলাফল দিতে পারে এবং বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণার আগ্রহ পূরণ করতে পারে। [১৭]
গ্যালাকটিক প্লেন সার্ভে আমাদের ছায়াপথের গঠন ও বিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। [১৭] বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র এবং আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের মানচিত্র তৈরি করে, রোমান স্পেস টেলিস্কোপ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে রূপদানকারী প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে অভূতপূর্ব অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে। [১৭]