পার্সিমন: হৃদযন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের জন্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ঋতুভিত্তিক ফল

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

পার্সিমন বর্তমানে একটি পুষ্টিকর ঋতুভিত্তিক ফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে, যা খাদ্যতালিকায় ফাইবার এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এই উজ্জ্বল কমলা রঙের ফলটি মূলত চীন, উত্তর ভারত এবং উত্তর ইন্দোচীন অঞ্চলের স্থানীয় হলেও বর্তমানে বিশ্বজুড়ে, বিশেষত ক্যালিফোর্নিয়াতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। জাপানি পার্সিমন, যা ডায়োস্পাইরোস কাকি (Diospyros kaki) নামে পরিচিত, তার স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত; চীনে এর চাষের ইতিহাস দুই হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো।

গবেষণায় দেখা গেছে যে জাপানি পার্সিমন হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে, কারণ এতে আপেলের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ফাইবার এবং ফেনোলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এই ফলগুলিতে কোয়ারসেটিন এবং কেম্পফেরলের মতো ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রক্তচাপ কমাতে এবং 'খারাপ' কোলেস্টেরল বা এলডিএল (LDL) কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। একটি নির্দিষ্ট গবেষণায় দেখা গেছে যে, যে সকল বয়স্ক ব্যক্তি ১২ সপ্তাহ ধরে পার্সিমন গ্রহণ করেছেন, তাদের এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। এই ফলের ট্যানিন-সমৃদ্ধ ফাইবার হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া (উচ্চ কোলেস্টেরল) চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকর খাদ্য উপাদান হতে পারে, যা বাইল অ্যাসিডের সাথে আবদ্ধ হয়ে কোলেস্টেরল শোষণ হ্রাস করে।

পার্সিমন পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও সহায়ক। এর উচ্চ ফাইবার উপাদান হজমে সহায়তা করে এবং রক্তপ্রবাহে গ্লুকোজের শোষণকে ধীর করে দেয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই ফলগুলিতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় প্রকার ফাইবারই বিদ্যমান, যা নিয়মিত মলত্যাগ বজায় রাখতে এবং সামগ্রিক হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পার্সিমন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, এবং পটাসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।

পার্সিমন ফল মূলত দুটি প্রধান প্রকারে পাওয়া যায়: অ্যাস্ট্রিনজেন্ট (Astringent) এবং নন-অ্যাস্ট্রিনজেন্ট (Non-astringent)। অ্যাকর্ন-আকৃতির হাছিয়া (Hachiya) হলো অ্যাস্ট্রিনজেন্ট প্রকার, যা পুরোপুরি নরম ও পেকে গেলে তবেই খাওয়ার উপযোগী হয়, কারণ কাঁচা অবস্থায় এতে ট্যানিনের কারণে মুখে কষটে ভাব আসে। অন্যদিকে, ফুইউ (Fuyu) হলো নন-অ্যাস্ট্রিনজেন্ট প্রকার, যা টমেটোর মতো দেখতে এবং পুরোপুরি না পাকলেও মচমচে অবস্থায় খাওয়া যায়, যার স্বাদ অনেকটা দারুচিনি ও এপ্রিকটের মিশ্রণের মতো। ক্যালিফোর্নিয়ার উৎপাদিত পার্সিমনগুলির মধ্যে ফুইউ একটি জনপ্রিয় নন-অ্যাস্ট্রিনজেন্ট জাত, যেখানে হাছিয়া সবচেয়ে প্রচলিত অ্যাস্ট্রিনজেন্ট জাতগুলির মধ্যে অন্যতম।

এই ফলগুলি কেবল তাজা খাওয়া হয় না, বরং জ্যাম, পুডিং, কেক এবং অন্যান্য মিষ্টি খাবারেও ব্যবহৃত হয়, বিশেষত হাছিয়া নরম হওয়ার পর এর কাস্টার্ড-সদৃশ শাঁস বেকিং-এর জন্য আদর্শ। পার্সিমন তার শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, যা ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে কোষীয় ক্ষতি হ্রাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে পার্সিমন আপেলের তুলনায় বেশি পরিমাণে ফেনোলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে, যা ধমনীর কাঠিন্য প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই মৌসুমি ফলটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং রক্তনালীগুলিকে নমনীয় ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।

18 দৃশ্য

উৎসসমূহ

  • MoneyControl

  • MedicalNewsToday

  • Netmeds

  • FreshPlaza

  • Times of India

  • Verywell Health

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।