প্রাচীন গুহাচিত্র ও মহাকাশীয় ঘটনার যোগসূত্র: এক নতুন গবেষণা

সম্পাদনা করেছেন: Tasha S Samsonova

প্রাচীন গুহাচিত্র কেবল মানুষের আশ্রয়স্থলই ছিল না, বরং তা ছিল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ শৈল্পিক অভিব্যক্তি, যা প্রাচীন জনগোষ্ঠীর জন্য গভীর প্রতীকী অর্থ বহন করত। সম্প্রতি 'অ্যানথ্রোপলজি' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা পূর্ব-ইসলামী যুগের চিত্রকলার উপর আলোকপাত করেছে। এই গবেষণার অংশ হিসেবে, পশ্চিম এশিয়ার পর্বতমালায় এবং প্রাচীন শিল্পকর্মের উপর গুহাচিত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ইরানে লৌহ যুগের বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গবেষণায় 'পেঁচা' প্রতীকটি ইউরোপীয় চিত্রকলার দিকে ইঙ্গিত করেছে, যেখানে প্রায়শই মহিলাদের পাশে পশুদের চিত্র এবং উর্বরতা বা চান্দ্র চক্রের ইঙ্গিতবাহী প্রতীক দেখা যায়। বিশেষত, প্রাচ্যে চিত্রিত গুহাচিত্রগুলি যাযাবর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষকরা পূর্ব ইরান থেকে ১৫০০ থেকে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের একটি ব্রোঞ্জের গুহাচিত্র মানচিত্র খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে পেঁচারা একটি মহিলাকে ঘিরে রয়েছে। এটি প্রাচীন 'আমর আল-রোনাল্ডি' ঘটনার প্রতিচ্ছবি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পূর্বের অন্যান্য অঞ্চলের পেঁচা-সম্পর্কিত চিত্রগুলি চাঁদ এবং মহাকাশীয় ঘটনার সাথে একটি শক্তিশালী সংযোগ স্থাপন করে।

ইরানের পূর্ব দিক থেকে প্রাপ্ত ১৫০০ থেকে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ব্রোঞ্জের শিল্পকর্মগুলিতে পেঁচাদের একটি মহিলাকে ঘিরে থাকার চিত্র দেখা যায়, যা 'আমর আল-রোনাল্ডি' ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়াও, আখমেনিদ যুগের (খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম ও চতুর্থ শতাব্দী) শিল্পকর্মগুলিতে পশু এবং হরিণের ছবি পাওয়া গেছে, যা পেঁচাকে পূর্বপুরুষদের প্রতীক হিসেবে ধারণাটিকে আরও শক্তিশালী করে। ইউফ্রেটিস নদীর পাশে পেঁচার ছবি বৃষ্টির ঋতুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যেখানে পেঁচার আচরণ সময় নির্ধারণেও সহায়ক হতে পারে।

প্রাচ্যের অন্যান্য চিত্রগুলি পেঁচার সাথে চাঁদ এবং মহাকাশীয় ঘটনার একটি শক্তিশালী ও নিশ্চিত সংযোগ নির্দেশ করে। গবেষকরা ইরানের পূর্বের বকুন, তেল হাসসার এবং সুসা-র মতো স্থানে চাঁদের সাথে সূর্য ও গ্রহগুলির চিত্রও তুলে ধরেছেন। প্রাচীন যুগের গুহাচিত্রগুলিতে শৈল্পিকভাবে চিত্রিত পেঁচা, বৃত্তাকার নকশা এবং তারকা-আকৃতির খোদাইগুলি চাঁদ এবং মহাকাশীয় ঘটনার সাথে সম্পর্কিত বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এই গবেষণা প্রাচীন শিল্পকলায় পেঁচার প্রতীকী গুরুত্ব তুলে ধরে এবং উর্বরতা, সময় ও মহাবিশ্বের সাথে তাদের সংযোগের উপর জোর দেয়, যা প্রাচীন জনগোষ্ঠীর প্রকৃতি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি প্রতিফলিত করে। প্রাচীন ইরান জ্যোতির্বিদ্যা এবং মহাকাশীয় ঘটনা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখত, যা তাদের শিল্পকর্মেও প্রতিফলিত হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ সাল থেকে প্রাচীন জ্যোতির্বিদরা নাক্ষত্রিক গতিবিধি রেকর্ড করতেন, যা তাদের শিল্পকর্মেও স্পষ্ট।

উৎসসমূহ

  • اليوم السابع

  • اليوم السابع

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।