বিজ্ঞানীরা স্ল্যাক ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটর ল্যাবরেটরির এমইসি লেজার ব্যবহার করে একটি স্বর্ণের নমুনাকে ১৯,০০০ কেলভিনে (১৮,৭২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) উত্তপ্ত করে অত্যন্ত উত্তপ্ত ও ঘন পদার্থের পরমাণুর তাপমাত্রা সফলভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই তাপমাত্রা স্বর্ণের গলনাঙ্কের ১৪ গুণেরও বেশি, তবুও পদার্থটি গলেনি। এই আবিষ্কারটি পদার্থবিদ্যা বিষয়ক একটি পুরনো তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে, যা অনুসারে কোনো কঠিন পদার্থকে তার গলনাঙ্কের তিন গুণের বেশি উত্তপ্ত করলে তা ভেঙে যায় বা গলে যায়। গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, পদার্থকে যথেষ্ট দ্রুত উত্তপ্ত করলে সুপারহিটেড পদার্থের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নাও থাকতে পারে।
এই গবেষণাটি নেচার (Nature) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি চরম তাপমাত্রায় পদার্থের উপর নতুন গবেষণার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই পদ্ধতিটি পূর্বে অসম্ভব বলে মনে করা হত, কারণ এই ধরনের চরম অবস্থায় পদার্থের তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। পূর্বের পদ্ধতিগুলো জটিল এবং যাচাই করা কঠিন মডেলের উপর নির্ভর করত, কিন্তু এই নতুন পদ্ধতি সরাসরি পরমাণুর গতিবেগ পরিমাপ করে, যা থেকে সিস্টেমের তাপমাত্রা জানা যায়।
এই যুগান্তকারী গবেষণাটি পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি কেবল স্বর্ণের মতো পদার্থের আচরণ সম্পর্কে আমাদের ধারণাকেই উন্নত করেনি, বরং মহাকাশ, জ্যোতির্বিদ্যা এবং পারমাণবিক রসায়নের মতো ক্ষেত্রগুলিতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই গবেষণার ফলাফলগুলি পারমাণবিক ফিউশন শক্তি গবেষণা এবং গ্রহের অভ্যন্তরের অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্ল্যাক-এর এমইসি (Matter in Extreme Conditions) যন্ত্রটি এই ধরনের গবেষণার জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে, যা উচ্চ-শক্তির লেজার এবং এক্স-রে ব্যবহার করে পদার্থের চরম অবস্থা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা এখন পদার্থের তাপমাত্রা আরও নির্ভুলভাবে পরিমাপ করতে পারবেন, যা পূর্বে অসম্ভব ছিল। এই আবিষ্কারটি পদার্থ বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে।