এমআইটি পদার্থবিদদের যুগান্তকারী প্রস্তাব: নিউট্রিনো লেজার

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-এর পদার্থবিদরা নিউট্রিনো লেজারের একটি অভিনব ধারণা তৈরি করেছেন। এই যুগান্তকারী ধারণাটি তেজস্ক্রিয় পরমাণুকে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় শীতল করে নিউট্রিনোর সুসংহত নিঃসরণ সক্ষম করার উপর ভিত্তি করে তৈরি। গবেষকরা নিউট্রিনো লেজার তৈরি করার জন্য এক মিলিয়ন রুবিডিয়াম-৮৩ পরমাণুকে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট অবস্থায় স্থানান্তরিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা তেজস্ক্রিয় ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করবে। এই অবস্থা পরমাণুগুলিকে পরম শূন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রায় একটি সুসংহত একক গঠন করতে দেয়। এই অবস্থায়, পরমাণুগুলি কয়েক মিনিটের মধ্যে দ্রুত এবং সুসংহত নিউট্রিনো নিঃসরণ করতে সক্ষম হবে।

ধারণাটি সুপাররেডিয়েন্সের অপটিক্যাল প্রভাব থেকে অনুপ্রাণিত, যেখানে পরমাণুগুলি আলোর মতো সমন্বিতভাবে নিঃসরণ করে, যা নিঃসরণকে বিবর্ধিত করে। তেজস্ক্রিয় পরমাণুতে এই নীতি প্রয়োগ করলে নিউট্রিনো নিঃসরণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটনের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক এবং সহ-লেখক বেন জোন্স ব্যাখ্যা করেছেন যে, লেজার যেমন দ্রুত ফোটন নিঃসরণ করে, তেমনই নিউট্রিনোও অনেক দ্রুত হারে নিঃসৃত হবে। এমআইটি-র অধ্যাপক এবং সহ-লেখক জোসেফ ফরম্যাজিও বলেছেন যে, এটি তেজস্ক্রিয় ক্ষয় এবং নিউট্রিনো উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করার একটি অভিনব উপায়, যা তার জানা মতে আগে কখনও করা হয়নি।

একটি নিউট্রিনো লেজারের বিকাশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। নিউট্রিনো পদার্থের সাথে খুব কম মিথস্ক্রিয়া করে বলে, একটি নিউট্রিনো রশ্মি পৃথিবীর ভেতর দিয়ে বাধাহীনভাবে যেতে পারবে। এটি ভূগর্ভস্থ স্টেশন বা মহাকাশ আবাসস্থলে পৌঁছাতে পারবে, যা কোনো ভৌত বাধা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হবে না। উপরন্তু, নিউট্রিনো লেজার একটি কার্যকর নিউট্রিনো ডিটেক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে অথবা যোগাযোগের একটি নতুন মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। যদি এটি পরীক্ষাগারে সফলভাবে প্রদর্শিত হয়, তবে এটি নিউট্রিনো ডিটেক্টর বা একটি নতুন যোগাযোগ পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

গবেষকরা একটি ছোট আকারের টেবিলটপ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের ধারণাটি পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছেন। যদি এটি সফল হয়, তবে নিউট্রিনো লেজার যোগাযোগ এবং চিকিৎসা নির্ণয় পদ্ধতিতে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে। प्रतिष्ठित জার্নাল ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্সে প্রকাশিত এই গবেষণাটি নিউট্রিনোর রহস্য উন্মোচন এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স-ভিত্তিক প্রযুক্তি বিকাশের পথ খুলে দিতে পারে। এই প্রস্তাবিত উন্নয়ন সাবঅ্যাটমিক জগতের আমাদের উপলব্ধি এবং ব্যবহারকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করতে পারে, যা বিভিন্ন শিল্পে নতুন গবেষণার পথ এবং ব্যবহারিক প্রয়োগকে চালিত করবে। পদার্থবিদ্যার গবেষণা একটি উত্তেজনাপূর্ণ নতুন যুগে প্রবেশ করছে যেখানে নিউট্রিনো অন্বেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যদিও এটি আপাতদৃষ্টিতে তাত্ত্বিক, নিউট্রিনো লেজার বিস্তৃত প্রয়োগের সম্ভাবনা রাখে যা আমাদের প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক ল্যান্ডস্কেপকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সমন্বিত তেজস্ক্রিয় ক্ষয় প্রক্রিয়া এবং সুসংহত নিউট্রিনো নিঃসরণের উৎপাদন বিভিন্ন শিল্পে নতুন গবেষণার ক্ষেত্র উন্মোচন করতে এবং ব্যবহারিক প্রয়োগকে উন্নত করতে পারে। এই ধারণাটি, যা সুপাররেডিয়েন্স নামক একটি কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল ঘটনা দ্বারা চালিত, নিউট্রিনো কণাগুলির আচরণকে নতুনভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। এই গবেষণাটি পদার্থবিদদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে, যা নিউট্রিনো সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও প্রসারিত করবে।

উৎসসমূহ

  • Glocalist

  • Physicists devise an idea for lasers that shoot beams of neutrinos

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।