একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোর (inner core) জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াটি কার্বনের উপস্থিতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে নেচার কমিউনিকেশনস (Nature Communications) জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, লিডস বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকরা সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, পৃথিবীর কেন্দ্রে প্রায় ৩.৮% কার্বন থাকলে এর কঠিন অভ্যন্তরীণ কোর গঠন শুরু হতে পারত। এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে, পূর্বে ধারণার চেয়ে বেশি পরিমাণে কার্বন পৃথিবীর কেন্দ্রে বিদ্যমান এবং এটি কঠিন অভ্যন্তরীণ কোর বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোর গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের ক্ষতিকারক সৌর বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। এই গবেষণার ফলাফল পৃথিবীর গভীর প্রক্রিয়া এবং গ্রহ বিজ্ঞান (planetary science) ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। পৃথিবীর কেন্দ্রের রাসায়নিক গঠন বোঝা গ্রহের তাপীয় বিবর্তন এবং এর চৌম্বক ক্ষেত্র চালনাকারী প্রক্রিয়াগুলি অনুধাবনের জন্য অপরিহার্য।
গবেষণায় পারমাণবিক-স্তরের কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপের মধ্যে গলিত লোহা জমে যাওয়ার প্রক্রিয়া মডেল করা হয়েছে। সিমুলেশনগুলি দেখিয়েছে যে কার্বনের উপস্থিতি কঠিন লোহার নিউক্লিয়েশন (nucleation) প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, যা অভ্যন্তরীণ কোর গঠনে সহায়তা করে। এর বিপরীতে, সিলিকন এবং সালফারের মতো উপাদানগুলি জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
এই গবেষণাটি প্রাকৃতিক পরিবেশ গবেষণা কাউন্সিল (Natural Environment Research Council - NERC) দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছে। পূর্বে ধারণা করা হতো যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোর জমাট বাঁধতে প্রায় ৮০০-১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস সুপারকুলিং (supercooling) প্রয়োজন। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৩.৮% কার্বন থাকলে মাত্র ২৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস সুপারকুলিং-এই প্রক্রিয়াটি সম্ভব। এটি অভ্যন্তরীণ কোরের পর্যবেক্ষণকৃত বৈশিষ্ট্যগুলির একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র ও এর গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও উন্নত করবে।