মিল্কি ওয়ের চেয়ে ১৮০ গুণ দ্রুত তারা তৈরি করছে আদিম ছায়াপথ Y1: জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চাঞ্চল্যকর পর্যবেক্ষণ

সম্পাদনা করেছেন: Uliana S.

Ярко-красное свечение из далекого прошлого: галактика Y1 светится благодаря частицам пыли, нагретым недавно образовавшимися звездами (обведено на этом снимке с телескопа Джеймса Уэбба).

আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী দল গত ১২ই নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা 'Y1' নামে চিহ্নিত একটি আদিম ছায়াপথকে শনাক্ত করেছেন, যা অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে নক্ষত্র সৃষ্টি করছে। এই ছায়াপথটি আমাদের নিজস্ব আকাশগঙ্গা বা মিল্কি ওয়ের চেয়ে প্রায় ১৮০ গুণ বেশি তীব্রতায় নতুন তারা তৈরি করছে। এই পর্যবেক্ষণগুলি মহাবিশ্বের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের ছায়াপথগুলির বিবর্তন প্রক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই যুগান্তকারী গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা অ্যাটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (ALMA) এবং জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST)-এর মতো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্য নিয়েছেন।

গ্যালাক্সি Y1 এবং এর আশেপাশের অঞ্চল, James Webb Space Telescope-এর NIRCAM (নীল ও সবুজ) এবং ALMA (লাল) সহ দেখা গেছে।

Y1 ছায়াপথ থেকে আসা আলো প্রায় ১৩.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পথ অতিক্রম করে পৃথিবীতে পৌঁছেছে। এর অর্থ হলো, আমরা আসলে মহাবিশ্বের সেই সময়টিকে দেখছি, যা কিনা মহা বিস্ফোরণের (Big Bang) মাত্র ৬০০ মিলিয়ন বছর পরের ঘটনা। এই আবিষ্কার প্রচলিত তাত্ত্বিক মডেলগুলিকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কারণ, এই মডেলগুলিতে মহাবিশ্বের এত প্রাথমিক পর্যায়ে এত দ্রুত গতিতে বিশাল ও উজ্জ্বল কাঠামোর জন্ম হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি। এই গবেষণার মূল চালিকাশক্তি ছিলেন সুইডেনের চালমার্স ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির শীর্ষ গবেষক টম বাকস। তাঁর সঙ্গে এই কাজে যুক্ত ছিলেন নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়োইচি তামুরা এবং লরা সোম্মোভিগো।

গবেষকরা উত্তেজিত হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের নির্গত রশ্মি শনাক্ত করতে সক্ষম হন, যা উচ্চ মাত্রার কার্যকলাপের সরাসরি প্রমাণ বহন করে। টম বাকসের মতে, এই পর্যবেক্ষণ করা আলো মূলত অতিরিক্ত উত্তপ্ত মহাজাগতিক ধূলিকণা থেকে আসছে, যা তীব্র নক্ষত্র সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে আবৃত করে রেখেছে। এই ফলাফল এই ধারণাকে সমর্থন করে যে, মহাবিশ্বের প্রথম দিকে এই ধরনের 'অতি-উত্তপ্ত নক্ষত্র কারখানা' সম্ভবত একটি সাধারণ, যদিও ক্ষণস্থায়ী, ঘটনা ছিল। ইয়োইচি তামুরা তথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছেন যে, পরিমাপকৃত তাপমাত্রা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে Y1 হলো নক্ষত্র উৎপাদনের এক বিশাল কেন্দ্র।

ALMA যন্ত্রটি ০.৪৪ মিলিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে যে পরিমাপ করেছে, তাতে ছায়াপথটির ধূলিকণার তাপমাত্রা প্রায় ৯০ কেলভিন (যা প্রায় -১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমতুল্য) পাওয়া গেছে। যদিও পৃথিবীর মানদণ্ডে এই তাপমাত্রা কম মনে হতে পারে, কিন্তু মহাবিশ্বের একই প্রাচীনত্বের অন্য কোনো তুলনীয় ছায়াপথের তুলনায় এটি অনেক বেশি। লরা সোম্মোভিগো এই প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেন যে, Y1-এর অত্যধিক ঔজ্জ্বল্য মূলত অল্প জায়গায় থাকা উত্তপ্ত ধূলিকণার ব্যতিক্রমী দক্ষতার কারণে, পুরোনো তারার বিপুল সংখ্যার জন্য নয়। এটি JWST দ্বারা পূর্বে লক্ষ্য করা তরুণ ছায়াপথগুলিতে ধূলিকণার যে আধিক্য দেখা গিয়েছিল, তার একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিতে পারে, যা আগে পুরোনো তারা থেকে উৎপন্ন হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পায়নি।

এই আবিষ্কারের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি মহাবিশ্বের বিবর্তন সংক্রান্ত বর্তমান ধারণাকে সরাসরি প্রশ্ন করে। গবেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের চরম গতিতে কাজ করা ছায়াপথগুলি সম্ভবত আদিম মহাবিশ্বে বেশ প্রচলিত ছিল। এই প্রসঙ্গে মে, ২০২৫ সালে আবিষ্কৃত J0107a ছায়াপথের কথাও উল্লেখ করা যায়। সেটি ১১.১ বিলিয়ন বছর আগে বিদ্যমান ছিল, যার ভর ছিল মিল্কি ওয়ের দশ গুণেরও বেশি এবং সেটি ৩০০ গুণ দ্রুত তারা তৈরি করছিল। তবে J0107a তারার জন্মকে ত্বরান্বিত করেছিল কেন্দ্রের দিকে গ্যাসের দ্রুত জমা হওয়ার মাধ্যমে, অন্যদিকে Y1 তার চরম দক্ষতা প্রদর্শন করছে তার ধূলিকণা উপাদানের মাধ্যমে।

JWST এবং ALMA থেকে প্রাপ্ত সম্মিলিত তথ্য প্রমাণ করে যে, প্রাথমিক মহাজাগতিক কাঠামো চিহ্নিত করার জন্য উচ্চ নির্ভুলতার পর্যবেক্ষণ কতটা জরুরি। 'মান্থলি নোটিস অফ দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি' জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি নিশ্চিত করে যে, আমরা এমন এক যুগে উঁকি দিচ্ছি, যেখানে মহাবিশ্ব আগেকার ধারণার চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল ছিল। বিজ্ঞানীরা এখন ALMA ব্যবহার করে Y1-এর অভ্যন্তরীণ গতিবিদ্যা এবং এই অসাধারণ উৎপাদন ক্ষমতার পেছনের প্রক্রিয়াগুলি আরও বিশদভাবে খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা করছেন।

উৎসসমূহ

  • www.nationalgeographic.com.es

  • ALMA Observatory

  • Reuters

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

মিল্কি ওয়ের চেয়ে ১৮০ গুণ দ্রুত তারা তৈরি ক... | Gaya One