মালাক্কা প্রণালীতে ঘূর্ণিঝড় সেনয়ারের উৎপত্তি এবং বঙ্গোপসাগরে দ্বিতীয় নিম্নচাপ ব্যবস্থা

২০২৫ সালের ২৬শে নভেম্বর, বুধবার ভোরে মালাক্কা প্রণালীর উপর একটি গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় সেনয়ার রূপে তীব্রতা লাভ করে, যা এক উল্লেখযোগ্য আবহাওয়াগত ঘটনার জন্ম দেয়। এই ঘূর্ণিঝড়টি ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ ১৮০০-এর দশকের শেষভাগ থেকে মালাক্কা প্রণালীতে এটি প্রথম ঘূর্ণিঝড় হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, এই ধরনের নিম্ন অক্ষাংশে (প্রায় ৫.০° উত্তর অক্ষাংশ) ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়া উত্তর ভারত মহাসাগরের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা, যেখানে পূর্বে মাত্র একটি অনুরূপ ঝড়, ২০০১ সালের ভামেই, নথিভুক্ত হয়েছিল।

সেনয়ারকে ০৪বি হিসাবেও শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে এবং এটি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, যেখানে ভারী বৃষ্টিপাত এবং সম্ভাব্য বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ২৫শে নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূল অতিক্রম করে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ থেকে ৯০ কিলোমিটার। সেনয়ারের কেন্দ্রস্থলটি প্রায় ৫.০° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৮.০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছিল এবং এটি ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার নিকটবর্তী ছিল। আবহাওয়া বিভাগ, অর্থাৎ ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (IMD), পূর্বাভাস দিয়েছে যে সেনয়ার ২৭শে নভেম্বর পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বজায় রাখতে পারে, এরপর এটি দুর্বল হতে শুরু করবে। সেনয়ার নামটি সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রস্তাব করেছিল এবং এর অর্থ 'সিংহ'।

এই ঘূর্ণিঝড়ের ভৌগোলিক অবস্থান এটিকে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে; মালাক্কা প্রণালী ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, মালয়েশিয়া এবং আন্দামান সাগরকে পৃথক করে রেখেছে এবং এটি আন্দামান সাগরকে দক্ষিণ চীন সাগরের সাথে সংযুক্তকারী একটি প্রধান নৌপথ। আবহাওয়া সংক্রান্ত এই যুগপৎ ঘটনাগুলি, বিশেষ করে মালাক্কা প্রণালীতে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি, যা সাধারণত ঘূর্ণিঝড়-মুক্ত অঞ্চল হিসাবে পরিচিত, তা বায়ুমণ্ডলীয় গতিবিদ্যার জটিলতা এবং অপ্রত্যাশিততার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD), যা উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের জন্য আঞ্চলিক বিশেষ আবহাওয়া কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, তারা এই ব্যবস্থার উপর নিবিড় নজর রাখছে।

একই সময়ে, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি দ্বিতীয় নিম্নচাপ ব্যবস্থা সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে, যা আগামী দিনগুলিতে দক্ষিণ ভারতীয় উপদ্বীপের জন্য প্রধান আবহাওয়ার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দ্বিতীয় ব্যবস্থাটি শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি তৈরি হয়েছিল এবং এটি বুধবার ভোরে একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়, যা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। এই দুটি ব্যবস্থার কাছাকাছি অবস্থানে থাকার কারণে, একটিকে তার বিকাশের স্থান ছেড়ে দিতে হয়েছিল, যার ফলে সেনয়ার বঙ্গোপসাগরের মূল এলাকার বাইরে গঠিত হতে পেরেছিল।

এই দ্বিতীয় নিম্নচাপ ব্যবস্থাটি এখন ভারতের তামিলনাড়ু এবং কেরালার কিছু অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য প্রধান মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, যা ২৬শে নভেম্বর থেকেই শুরু হওয়ার কথা। বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিকে একটি বিরল 'যমজ নিম্নচাপ' বা 'যমজ ঘূর্ণিঝড়' পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, যা উত্তর ভারত মহাসাগরে আগে দেখা যায়নি। আবহাওয়া বিশ্লেষক কে শ্রীকান্ত উল্লেখ করেছেন যে সেনয়ারের উৎপত্তিগত অবস্থান আবহাওয়াবিদদের বিস্মিত করেছে, যদিও তামিলনাড়ুর আবহাওয়ার উপর এর সরাসরি কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ এটি প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার দূরে ছিল। বরং, শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি থাকা এই দ্বিতীয় ব্যবস্থাটিই তামিলনাড়ু, পুদুচেরি উপকূল এবং কেরালার জন্য আর্দ্রতার একটি ঢেউ নিয়ে আসছে, যেখানে ২৬শে নভেম্বর থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই দ্বিতীয় সিস্টেমটি উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে তামিলনাড়ু-পুদুচেরি উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।