মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কৌতূহলী স্তন্যপায়ী প্রাণী কোয়াটিরা বর্তমানে মেক্সিকোর জনপ্রিয় অবকাশ কেন্দ্রগুলিতে ক্রমশ বেশি সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে, যা মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে নতুন ধরনের মিথস্ক্রিয়া তৈরি করেছে। এই সর্বভুক প্রাণীগুলি প্রায়শই 'ব্যান্ড' নামক সামাজিক দল গঠন করে এবং এদের খাদ্যের প্রধান অংশ হলো ফল। কোয়াটিদের দেখতে অনেকটা র্যাকুনের মতো এবং এরা তাদের লম্বা নাক ও সরু দেহের জন্য পরিচিত। সাধারণত, স্ত্রী কোয়াটি, অল্পবয়সী পুরুষ এবং শাবকরা একসাথে দলবদ্ধভাবে চলাচল করে, যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষেরা একাকী জীবনযাপন করে এবং কেবল প্রজনন ঋতুতেই দলের সাথে মিলিত হয়।
২০২৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যের সন্ধানে হোটেল কক্ষে প্রবেশ করার মাধ্যমে কোয়াটিরা মানুষের উপস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে। এই আচরণ অবকাশ যাপনকারীদের মধ্যে একইসাথে কৌতুক ও উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। কিছু পর্যটকের মতে, এই প্রাণীগুলি তাদের মিষ্টি চেহারা এবং বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে অতিথিদের কাছ থেকে খাবার আদায়ের চেষ্টা করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন যে কোয়াটিরা বন্য এবং অপ্রত্যাশিত হতে পারে, তাই তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা অপরিহার্য। পর্যটকদের প্রাণীগুলিকে খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, কারণ এতে তারা মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে এবং সম্ভাব্য আগ্রাসী আচরণ করতে পারে।
এই পরিস্থিতি পর্যটন এলাকার পরিবেশগত ভারসাম্যের উপর আলোকপাত করে। অনেক রিসর্ট ঘন জঙ্গলের মধ্যে নির্মিত, যেখানে কোনো বেড়া বা বেষ্টনী নেই, যা বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দেয়। কোয়াটিদের নিজস্ব খাদ্যের সন্ধান বজায় রাখা স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অবাঞ্ছিত বন্যপ্রাণীর প্রবেশ রোধ করার জন্য খাদ্যদ্রব্য সুরক্ষিত রাখা এবং দরজা-জানালা বন্ধ রাখার মতো সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রধান সুপারিশগুলির মধ্যে অন্যতম।
গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো, যদিও কোয়াটিদের সাধারণত জলাতঙ্ক ভাইরাসের গুরুত্বপূর্ণ বাহক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, মেক্সিকোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তাদের মধ্যে জলাতঙ্কের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ১৯৯৩ সাল থেকে মেক্সিকোর বিভিন্ন পরীক্ষাগারে কোয়াটির নমুনা পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে জলাতঙ্ক সংক্রমণ রোধে কোয়াটিদের উপর নজরদারি রাখা প্রয়োজন। এই ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রকৃতির সাথে আমাদের প্রতিটি সংযোগই একটি সুযোগ—এটি কেবল একটি সমস্যা নয়, বরং আমাদের পরিবেশের সাথে আমাদের সম্পর্ককে নতুন করে বোঝার এবং দায়িত্বশীলতার সাথে পরিচালনা করার একটি আহ্বান। রিসর্টগুলির আশেপাশে এই প্রাণীদের উপস্থিতি মানুষের জীবনযাত্রার সাথে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্রকে তুলে ধরে, যেখানে সচেতনতাই নিরাপদ সহাবস্থানের চাবিকাঠি।