সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে কুকুরের বংশগতির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচিত হয়েছে, যেখানে শাবকের জিনগত গঠনে পিতামাতার বয়সের প্রভাব প্রমাণিত হয়েছে। হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ৩৯০টি পিতা-মাতা-সন্তান ত্রয়ী বিশ্লেষণ করে নতুন বা ডি নোভো মিউটেশনগুলির গতিপথ চিহ্নিত করেছেন, যা বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া অনুধাবনের জন্য অপরিহার্য। এই গবেষণায় স্পষ্টতই দেখা গেছে যে পিতামাতার বয়সের সঙ্গে নতুন মিউটেশনের সংখ্যার একটি দৃঢ় যোগসূত্র বিদ্যমান।
বিশেষত, পিতার বয়স বৃদ্ধি পেলে শাবকের দেহে ডি নোভো মিউটেশনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। যদিও মায়ের বয়সের প্রভাবও লক্ষ্য করা গেছে, তা পিতার বয়সের তুলনায় কম প্রকট ছিল। প্রজাতির আকার এই মিউটেশন সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বড় আকারের কুকুর প্রজাতিগুলিতে জীবনের প্রথম দিকেই বেশি মিউটেশন জমা হয়, অন্যদিকে ছোট আকারের প্রজাতিগুলিতে পিতামাতার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডি নোভো মিউটেশনের হার দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তবে প্রজন্ম প্রতি মোট মিউটেশনের পরিমাণ সব প্রজাতির ক্ষেত্রেই স্থিতিশীল থাকে, যা বংশবৃদ্ধির তীব্র চাপ সত্ত্বেও মৌলিক হারগুলির অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যের ইঙ্গিত দেয়।
গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে কুকুরের জিনোমে নতুন মিউটেশনগুলি মূলত জিনের নিয়ন্ত্রণকারী অঞ্চল, যা সিপিজি আইল্যান্ডস (CpG islands) নামে পরিচিত, সেখানে কেন্দ্রীভূত হয়। কুকুরের এই স্থানিক বিন্যাস মানুষের ফলাফলের থেকে ভিন্ন, যার একটি সম্ভাব্য কারণ হলো কুকুরের মধ্যে PRDM9 নামক প্রোটিনের অনুপস্থিতি। এই প্রোটিনটি অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে জিনগত পুনর্মিলন নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কুকুরের ক্ষেত্রে PRDM9-এর অভাবের কারণে পুনর্মিলন উন্মুক্ত ক্রোমাটিন অঞ্চলে, বিশেষত সিপিজি আইল্যান্ডসে, নির্দেশিত হয়, যা মিউটেশনের এই স্বতন্ত্র বণ্টনকে ব্যাখ্যা করে।
এই গবেষণার মাধ্যমে প্রতি বেস পেয়ার প্রতি প্রজন্মে একটি জার্মলাইন মিউটেশন হার ৪.৮৯ × ১০⁻⁹ অনুমান করা হয়েছে। কুকুরের ক্ষেত্রে পিতার বয়সের প্রভাব মানুষের তুলনায় ১.৫ গুণ বেশি শক্তিশালী বলে নির্ণীত হয়েছে। এই গভীর জ্ঞান বংশবৃদ্ধির কৌশলগুলিকে আরও সূক্ষ্মভাবে সাজাতে সহায়ক হবে, যার মাধ্যমে বংশগত রোগের ঝুঁকি হ্রাস করার নতুন পথ উন্মোচিত হতে পারে। এই মৌলিক তথ্য কুকুরের জিনগত বৈচিত্র্য ও রোগের প্রবণতা বোঝার পাশাপাশি PRDM9 অনুপস্থিত অন্যান্য প্রজাতির জিনোমিক গবেষণার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করে।