দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের রহস্য: সুইডিশ শতবর্ষীদের থেকে শিক্ষা

সম্পাদনা করেছেন: Liliya Shabalina

সুইডিশ শতবর্ষীদের জীবনযাত্রা এবং বার্ধক্য নিয়ে এক নতুন গবেষণা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ১০০ বছর বা তার বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকেন, তাদের বার্ধক্যের প্রক্রিয়া অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। এই শতবর্ষীরা কেবল দীর্ঘজীবীই হন না, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি সুস্থ থাকেন এবং তাদের মধ্যে রোগের প্রকোপও কম থাকে। গবেষণায় প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার সুইডিশ নাগরিকের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখা গেছে, যারা শতবর্ষী হয়েছেন, তারা তাদের সমবয়সী যারা অল্প বয়সে মারা গেছেন, তাদের চেয়ে অনেক কম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষ করে, ৭০ বছর বয়সে মাত্র ২৪.৮% ভবিষ্যৎ শতবর্ষীর হৃদরোগ ধরা পড়েছিল, যেখানে অন্য দলের মধ্যে এই হার ছিল ৫১.৬%। এই পার্থক্যটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ হৃদরোগ এবং মস্তিষ্কের রক্তনালীর রোগগুলি (cerebrovascular conditions) বার্ধক্যে অক্ষমতা এবং মৃত্যুর প্রধান কারণ।

গবেষকরা আরও লক্ষ্য করেছেন যে, নব্বই বছর বয়সের পর অনেক মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি হলেও, শতবর্ষীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের একটি স্থিতিশীলতা দেখা যায়, যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কয়েক বছর বজায় থাকে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী জৈবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, যা ৭০ বছর বয়স থেকেই প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্ভবত জিনগত, পরিবেশগত এবং জীবনযাত্রার কারণগুলির একটি সম্মিলিত ফল। ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক কারিন মোডিগ বলেছেন, "আমাদের ফলাফলগুলি এই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে যে দীর্ঘ জীবন মানেই বেশি রোগ। আমরা দেখিয়েছি যে শতবর্ষীরা একটি ভিন্ন বার্ধক্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান, যেখানে রোগের অগ্রগতি ধীর এবং সাধারণ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।" এই গবেষণার ফলাফলগুলি কেবল দীর্ঘ জীবনকাল নয়, বরং সুস্থ জীবনকাল (healthspan) বাড়ানোর নতুন কৌশল তৈরিতেও সাহায্য করতে পারে। সুইডিশ শতবর্ষীদের জীবনযাত্রা থেকে প্রাপ্ত এই শিক্ষাগুলি আমাদের স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের পথে চালিত করতে পারে। একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, শতবর্ষীদের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট রক্ত ​​পরীক্ষার ফলাফল (biomarkers) তাদের দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের ইঙ্গিত দেয়। যেমন, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা, কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা এবং প্রদাহের (inflammation) সূচকগুলি সাধারণত স্বাভাবিক সীমার মধ্যে থাকে। এই বিষয়গুলি জীবনের প্রথম দিকেই পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা দীর্ঘায়ু লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে। সুইডিশ জীবনযাত্রার অন্যান্য দিকগুলির মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, যেখানে ফল, সবজি, শস্য এবং মাছের উপর জোর দেওয়া হয়, এবং নিয়মিত সামাজিক কার্যকলাপ, যেমন 'ফিকা' (fika) নামক কফি বিরতি, যা মানসিক সুস্থতা বাড়াতে সাহায্য করে।

উৎসসমূহ

  • Futura

  • Institut national d’études démographiques (INED)

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।