জাপান এক নতুন দীর্ঘায়ুত্বের মাইলফলক অর্জন করেছে, যেখানে প্রায় ৯৯,৭৬৩ লক্ষ মানুষ ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী। এই সংখ্যা গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে, গত এক বছরেই প্রায় ৪,৬৪৪ জনের বেশি শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। [২০, ২৪] এই দীর্ঘায়ুত্বের পেছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। নারী ও পুরুষদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যেখানে প্রায় দশ জনের মধ্যে নয় জন শতবর্ষী মহিলা। [৬, ২০, ২৪] জাতীয় গড় অনুসারে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় ৮০ জনের বেশি শতবর্ষী রয়েছে, কিছু প্রদেশে এই ঘনত্ব দ্বিগুণ দেখা যায়। [২৬] বিশেষজ্ঞরা জাপানের এই অসাধারণ দীর্ঘায়ুত্বের পেছনে বেশ কিছু কারণকে দায়ী করেছেন।
ঐতিহ্যবাহী জাপানি খাদ্য, যা মাছ, সয়াবিন, শাকসবজি এবং সবুজ চা-তে সমৃদ্ধ, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। [৩, ৪, ৭, ৮, ১০, ১১] এই খাদ্যাভ্যাস উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার পরিপূরক, যা প্রতিরোধমূলক যত্নের উপর জোর দেয়। [২, ১৪, ১৫] এছাড়াও, সক্রিয় জীবনধারা এবং শক্তিশালী সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। [৩, ৫, ১৩] যদিও জিনগত কারণ একটি ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরিস্থিতি জাপানের বিশ্বব্যাপী দীর্ঘায়ুত্বের পরিসংখ্যানের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। [২]
জাপানের এই জনসংখ্যাগত প্রবণতা কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে, যেমন পেনশন এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর ক্রমবর্ধমান চাপ এবং কর্মক্ষম জনসংখ্যার হ্রাসজনিত অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ। [১৯, ২১, ২২] জাপানের দীর্ঘায়ুত্বের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে কম স্থূলতার হার এবং একটি অনন্য খাদ্যাভ্যাস, যেখানে লাল মাংসের ব্যবহার কম এবং মাছ, সয়াবিন ও চা-এর মতো উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারের ব্যবহার বেশি। [৩, ৪] ওকিনাওয়ার মতো অঞ্চলে 'ইকিগাই' (জীবনের উদ্দেশ্য) এবং সামাজিক বন্ধনের মতো বিষয়গুলিও দীর্ঘায়ু বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে মনে করা হয়। [৩, ১৩]
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দিকে তাকালে, জাপান একটি সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা পরিচালনা করে, যেখানে প্রায় সকল নাগরিক অন্তর্ভুক্ত। [২, ১৪, ১৫, ১৭] প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার উপর জোর দেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা দীর্ঘায়ু অর্জনে সহায়ক। [৩, ৬] তবে, এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তনগুলি জাপানের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। কর্মক্ষম জনসংখ্যার হ্রাস, পেনশন ব্যবস্থার উপর চাপ এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এই চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে অন্যতম। [২, ১৪, ১৫, ১৬, ১৯] এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধি এবং বয়স্কদের জন্য সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কমানোর প্রচেষ্টা। [২১]