আমাদের পূর্বপুরুষদের বিশ্বকে দেখার নির্দিষ্ট উপায়গুলি আমাদের অনেক সাধারণ কুসংস্কারের মধ্যে নিহিত রয়েছে। এই বিশ্বাসগুলি, যেমন 'কালো বিড়াল পথ অতিক্রম করলে দুর্ভাগ্য হয়' বা 'বাড়ির ভিতরে শিস দিলে অর্থ থাকবে না', বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পরেও তাদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রেখেছে।
কালো বিড়াল পথ অতিক্রম করলে দুর্ভাগ্য হয় - এই কুসংস্কারের উৎস প্রাচীন মিশরে, যেখানে বিড়ালদের দেবী বাস্তেতের সঙ্গে যুক্ত করে পূজা করা হতো। তবে মধ্যযুগে এই ধারণা পরিবর্তিত হয় এবং বিড়ালদের ডাইনিবিদ্যা ও শয়তানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১২২৩ সালে পোপ নবম গ্রেগরি একটি বুল mengeluarkan করেন যেখানে শয়তানদের 'অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক বিড়াল' হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যার ফলে বিড়ালদের উপর ব্যাপক অত্যাচার নেমে আসে। এটি প্লেগের বিস্তারেও অবদান রেখেছিল বলে মনে করা হয়, কারণ রোগ বহনকারী বিড়ালদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। এইভাবেই কালো বিড়ালকে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পূর্বাভাস হিসেবে দেখার একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি তৈরি হয়েছিল। যদিও কিছু সংস্কৃতিতে, যেমন জাপান ও আয়ারল্যান্ডে, কালো বিড়ালকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে, বিশেষ করে ব্রিটিশ শাসনের সময়, এই ধারণা পশ্চিমা দেশগুলো থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়, যেখানে কালো রঙকে শনি গ্রহের সঙ্গে যুক্ত করা হয় এবং অশুভ বলে মনে করা হয়। তবে, হিন্দু ধর্মে কালো বিড়ালকে সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।
'বাড়ির ভিতরে শিস দিলে অর্থ থাকবে না' - এই প্রবাদটি বাড়ির ভিতরে শিস দিলে অশুভ আত্মা বা দানবদের আকর্ষণ করে এই বিশ্বাসের সাথে যুক্ত। স্লাভিক ঐতিহ্য অনুসারে, বাড়ির ভিতরে শিস দিলে গৃহস্থের আত্মা বা অশুভ আত্মাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এছাড়াও, ষোড়শ শতাব্দীতে, খ্রিস্টান এবং ব্যবসায়ীরা তাদের মুদ্রা হারানোর ভয়ে মুখে রাখতেন। শিস দিলে মুদ্রা পড়ে যেতে পারে, তাই ব্যবসায়ীরা সতর্ক করতেন, 'শিস দিও না, নইলে তোমার টাকা থাকবে না'। সময়ের সাথে সাথে, এই উক্তিটি শিস দেওয়ার প্রতি একটি নেতিবাচক মনোভাব প্রতিফলিত করে একটি প্রবাদে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ায়, বাড়ির ভিতরে শিস দিলে দারিদ্র্য আসে বলে মনে করা হয়, এবং একটি রুশ প্রবাদ আছে – 'শিস দিয়ে টাকা উড়িয়ে দেওয়া'।
কোকিলের ডাক ভবিষ্যৎ বলে - এই বিশ্বাসটি ইউরোপ এবং এশিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত। স্লাভরা এই পাখিকে বসন্ত ও উর্বরতার দেবী ঝিভার সাথে যুক্ত করত। মনে করা হতো, কোকিলের ডাকের সংখ্যা বিবাহের বা মৃত্যুর বছরগুলি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। আধুনিক গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে কোকিলের উপস্থিতি সহ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য মানুষের জীবনের ধারাবাহিকতার সাথে যুক্ত থাকতে পারে, যা এই কুসংস্কারকে একটি পরিবেশগত ভিত্তি দেয়।
স্লাভিক সংস্কৃতিতে, একটি খালি পাত্রকে দারিদ্র্য এবং মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে দেখা হত। তবে, উনিশ শতকের ফ্রান্সে, টেবিলে খালি চায়ের কাপের সংখ্যা প্রাচুর্যের লক্ষণ হিসাবে বিবেচিত হত। যখন ১৮১৪ সালে রাশিয়ান সেনাবাহিনী প্যারিস প্রবেশ করে, তখন সৈন্যরা টেবিলের নিচে খালি কাপ লুকিয়ে রাখত যাতে তাদের কম অর্থ প্রদান করতে হয়। এটি খালি কাপ সরানোর অভ্যাসকে উৎসাহিত করতে পারে, যা সময়ের সাথে সাথে একটি কুসংস্কারে রূপান্তরিত হয়েছে।
স্লাভিক সংস্কৃতিতে, দরজার চৌকাঠকে জগৎের সীমানা - গার্হস্থ্য এবং অলৌকিক - হিসাবে প্রতীকায়িত করা হত। বিশ্বাস করা হত যে চৌকাঠের উপর দিয়ে জিনিসপত্র পার করলে মৃত আত্মাদের বিরক্ত করা হতে পারে এবং দুর্ভাগ্য আসতে পারে, যা জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে গভীর বিশ্বাস এবং পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাকে প্রতিফলিত করে।
স্লাভরা বিশ্বাস করত যে বাম কাঁধে একটি অপদেবতা এবং ডান কাঁধে একটি রক্ষাকারী দেবদূত বসে থাকে। ভালো কথা শুনলে অপদেবতা সেগুলোকে নষ্ট করার চেষ্টা করত। জোরে শব্দ করা এবং শিস দেওয়া তাকে দূরে তাড়িয়ে দিত বলে মনে করা হত। তিন সংখ্যাটি খ্রিস্টান ঐতিহ্য থেকে এসেছে, যা পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মার প্রতীক। এই প্রথা আজও বিদ্যমান: ভালো কিছুর জন্য আমরা অজান্তেই 'ছিঃ-ছিঃ-ছিঃ' বলে থাকি।
মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, কুসংস্কারগুলি অনিশ্চয়তার মুখে নিয়ন্ত্রণের একটি অনুভূতি প্রদান করে, উদ্বেগ হ্রাস করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এই বিশ্বাসগুলি প্রায়শই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত হয় এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় ও সামাজিক বন্ধনের অংশ হয়ে ওঠে। যদিও এই বিশ্বাসগুলির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তবুও তারা মানুষের মনস্তত্ত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।