মেক্সিকোর চিয়াপাসের ২৯ বছর বয়সী কবি ও শিক্ষক আন্দ্রেস তা চিকিনিব তার তজোৎজিল ভাষার জন্য এক যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটজিপিটি-কে তার আঞ্চলিক উপভাষার শব্দভাণ্ডার, ব্যাকরণ এবং সাংস্কৃতিক সূক্ষ্মতা শেখাচ্ছেন, যাতে এই ভাষাটি ডিজিটাল যুগে টিকে থাকতে পারে। চিয়াপাসে প্রায় ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই মায়া ভাষাটি ব্যবহার করেন, এবং এর ডিজিটাল উপস্থিতি নিশ্চিত করা চিকিনিবের মূল লক্ষ্য।
শিক্ষাগত উপকরণের অভাব চিকিনিবকে এই অভিনব পথে চালিত করেছে। তিনি স্প্যানিশ অনুবাদ এড়িয়ে চলেছেন, যাতে তজোৎজিল ভাষার নিজস্বতা বজায় থাকে। চিকিনিব বলেন, "চ্যাটজিপিটি একজন অধ্যবসায়ী ও অনুসন্ধিৎসু ছাত্রের মতো হয়ে উঠেছে, যে স্পষ্টতা ও সঙ্গতি দাবি করে।" এই এআই কেবল পাঠ পুনরাবৃত্তিই করেনি, বরং প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে, প্যাটার্ন সনাক্ত করেছে এবং তজোৎজিলের অনন্য ভাষাগত শিকড় খুঁজে বের করেছে।
চিকিনিবের এই প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সংরক্ষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান ভূমিকার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বর্তমানে অনেক আদিবাসী ভাষা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুপস্থিত, যা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে। এআই প্রযুক্তি, যেমন ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) এবং মেশিন লার্নিং (ML), ভাষা নথিভুক্তকরণ, শিক্ষামূলক উপকরণ তৈরি এবং ভাষা শেখার প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে পারে। এর মাধ্যমে, তজোৎজিলের মতো ভাষাগুলি কেবল টিকে থাকবে না, বরং ডিজিটাল জগতে তাদের একটি শক্তিশালী স্থান করে নিতে পারবে।
তবে, এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে কিছু উদ্বেগও জড়িত। কিছু ভাষাবিদ "ভাষাগত উপনিবেশবাদ" (linguistic colonialism) এর ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলি প্রভাবশালী ভাষাগুলির দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এছাড়াও, ডেটার অভাব এবং সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার মতো বিষয়গুলি এআই-ভিত্তিক ভাষা সংরক্ষণে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলি সত্ত্বেও, চিকিনিবের মতো ব্যক্তিরা দেখিয়েছেন যে সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে এআই আদিবাসী ভাষাগুলির জন্য একটি সহায়ক হাতিয়ার হতে পারে। আন্দ্রেস তা চিকিনিবের উদ্যোগ কেবল একটি ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা নয়, বরং এটি ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে এক সেতুবন্ধন। এটি দেখায় যে কীভাবে সম্প্রদায়গুলি সক্রিয়ভাবে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নতুন প্রযুক্তির সাথে একীভূত করে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি কেবল ভাষার ডিজিটাল উপস্থিতিই বাড়ায় না, বরং এটি তজোৎজিল সম্প্রদায়ের জন্য নতুন পরিচিতি এবং স্বীকৃতির পথ খুলে দেয়, যা তাদের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করে। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতিটি প্রমাণ করে যে, যখন জ্ঞান এবং প্রযুক্তির সঠিক সমন্বয় ঘটে, তখন তা কেবল সংরক্ষণই করে না, বরং নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে এবং মানব অভিজ্ঞতার গভীরতাকে আরও সমৃদ্ধ করে।