উচ্চ অ্যাটলাস পর্বতমালার গভীরে, যেখানে জনবসতি ক্রমশ কমে আসছে, সেখানে হাম্মু এবং তার পুত্র ব্রহ্মিমের মতো মেষপালকরা একটি প্রাচীন শিস দেওয়া ভাষার মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এই অনন্য যোগাযোগ পদ্ধতি, যা আমাজিগ (বারবার) ভাষায় 'আসিনিগ' নামে পরিচিত, প্রায় ২.৫ থেকে ৩ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বার্তা আদান-প্রদানে সক্ষম। এই শিস দেওয়া ভাষা সাধারণ কথার বিকল্প হিসেবে কাজ করে, যা পাহাড়ী অঞ্চলে শব্দের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে সাহায্য করে। এটি ছোটবেলা থেকেই শেখা হয়, ঠিক যেমন হাঁটা বা কথা বলা শেখা হয়। যদিও এই ভাষার প্রচলন মূলত উচ্চ অ্যাটলাস পর্বতমালায় দেখা যায়, তবে বিশ্বজুড়ে মেক্সিকো, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ এবং পাপুয়া নিউ গিনির মতো স্থানেও অনুরূপ শিস দেওয়া ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে। ভাষাবিদ জুলিয়েন মেয়ার উল্লেখ করেছেন যে ৯০টিরও বেশি ভাষার শিস দেওয়া রূপ নথিভুক্ত করা হয়েছে।
তবে, গ্রামীণ অভিবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই প্রাচীন প্রথাটি আজ হুমকির মুখে। মরক্কোর ইমজেরি গ্রামের মতো বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে, যেখানে হাম্মু ও ব্রহ্মিম বাস করেন, সেখানে মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাব অনেক পরিবারকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করছে। এই অভিবাসন শিস দেওয়া ভাষার বিলুপ্তির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, কারণ এই ভাষা পশুপালনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
সাম্প্রতিক তীব্র খরা মেষপালকদের তাদের পশুদের জন্য চারণভূমি খুঁজতে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ঐতিহ্যবাহী পশুপালন জীবনযাত্রা, যা ঋতুভিত্তিক স্থানান্তরের উপর নির্ভরশীল, তা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ ব্যাহত হচ্ছে। গবেষক ফাতিমা-জাহরা সালিহ এই শিস দেওয়া ভাষা নথিভুক্ত করার জন্য কাজ করছেন, যাতে এটি ইউনেস্কো (UNESCO) দ্বারা সংরক্ষিত হতে পারে। চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চলছে। ব্রহ্মিম আমরাউই এই ঐতিহ্য রক্ষার জন্য একটি সমিতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তার পুত্র মোহাম্মদ সেই অল্প কয়েকজন তরুণদের মধ্যে একজন যারা এখনও এই ভাষা ব্যবহার করে। আশা করা যায় যে, ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং অনুকূল পরিবেশগত অবস্থার সাথে এই অনন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা টিকে থাকবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মরক্কোর গ্রামীণ অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে পূর্ব মরক্কোর উচ্চ মালভূমি অঞ্চলে, যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে পশুপালনের উপর নির্ভরশীল জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি অনেক পরিবারকে তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে শহরে অভিবাসন করতে বাধ্য করছে। এই অভিবাসন কেবল অর্থনৈতিক সমস্যাই তৈরি করছে না, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকেও বিপন্ন করে তুলছে। ইউনেস্কো (UNESCO) মরক্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে, মরক্কোর ১৫টি ঐতিহ্যবাহী উপাদান ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।