১৬০৫ সালে প্রকাশিত ইতালীয় জেসুইট মিশনারি মাতেও রিচ্চির 'শিজি কিজি' (পশ্চিমা শব্দের অলৌকিকতা) গ্রন্থটি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের এক যুগান্তকারী প্রচেষ্টা ছিল। এই বইটি কেবল পশ্চিমা পণ্ডিতদের চীনা ভাষা শেখার পথই খুলে দেয়নি, বরং দুই ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ানোর এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। রিচ্চি, যিনি তার সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন, ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি চীনা সংস্কৃতি, দর্শন ও ভাষার গভীরে প্রবেশ করেছিলেন। তার এই কাজ পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
'শিজি কিজি' পাঁচটি অংশে বিভক্ত। প্রথম তিনটি অংশে বাইবেলের কাহিনীগুলিকে ধ্রুপদী চীনা ভাষায় এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা কনফুসীয় নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি ছিল পশ্চিমা ধর্মতত্ত্বকে চীনা সমাজের মূলধারার সাথে যুক্ত করার এক সুচিন্তিত প্রয়াস। শেষ দুটি অংশে রিচ্চি চীনের বিখ্যাত কালি চিত্রকর চেং দাইয়ুয়ে-এর সাথে তার কথোপকথনের বিবরণ দিয়েছেন, যেখানে ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা এবং লিখিত ভাষার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই অংশগুলি ভাষার মাধ্যমে গভীর দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক ধারণা আদান-প্রদানের এক চমৎকার উদাহরণ।
সম্প্রতি 'শিজি কিজি'-এর কিছু অংশের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা সমসাময়িক পাঠকদের জন্য এই ঐতিহাসিক গ্রন্থটিকে আরও সহজলভ্য করে তুলেছে। এই অনুবাদটি মূল ধ্রুপদী চীনা ভাষারীতি বজায় রেখেছে এবং রিচ্চির রোমান হরফের টীকাগুলিও অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা তার কাজের ভাষাগত ও সাহিত্যিক উৎকর্ষতাকে তুলে ধরে।
'শিজি কিজি' পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে প্রাথমিক সাংস্কৃতিক সংলাপের একটি প্রতীক। খ্রিস্টীয় আখ্যানগুলিকে কনফুসীয় মূল্যবোধের সাথে মিলিয়ে রিচ্চি চীনে পশ্চিমা ধারণাগুলির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি জিউ জিকুই-এর মতো চীনা পণ্ডিতদের সাথে ইউক্লিডের 'এলিমেন্টস' গ্রন্থটিকে চীনা ভাষায় অনুবাদ করার কাজেও যুক্ত ছিলেন। এই সহযোগিতাগুলি সিনো-পশ্চিমা সাংস্কৃতিক বিনিময়ে রিচ্চির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রমাণ করে। মাতেও রিচ্চির এই কাজ আজও ভাষার সেই অসামান্য ক্ষমতাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যা সাংস্কৃতিক বাধা অতিক্রম করতে পারে। তার অনুবাদ ও অভিযোজনের এই অগ্রণী পদ্ধতি আজও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ইতিহাসে গবেষক ও পাঠকদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।