বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭,১০০ টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত আছে, যা মানব সংস্কৃতির এক বিশাল বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে। এই নিবন্ধে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বহুভাষিক পাঁচটি দেশ – পাপুয়া নিউ গিনি, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – নিয়ে আলোচনা করব।
পাপুয়া নিউ গিনি ভাষাগত বৈচিত্র্যের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে। এখানকার প্রায় ৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৮৪০টি ভাষা প্রচলিত। এই দেশটিতে প্রায় ৫৫০টি প্রাচীন 'পাপুয়ান' ভাষা রয়েছে, যার শেকড় প্রায় ৪০,০০০ বছর পুরনো। এছাড়াও, প্রায় ৩,৫০০ বছর আগে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২০০টি 'অস্ট্রোনেশিয়ান' ভাষা প্রবেশ করেছিল। এই অসাধারণ ভাষাগত বৈচিত্র্যের মূল কারণ হল দেশটির দুর্গম ভৌগলিক অবস্থান, যেখানে উপত্যকা এবং কঠিন ভূখণ্ড বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে, ফলে ভাষার স্বতন্ত্র বিবর্তন ঘটেছে।
ইন্দোনেশিয়া, প্রায় ১৮,০০০ দ্বীপপুঞ্জের একটি দেশ, যেখানে ৭০০ টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত। প্রায় ২৭২ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশে 'বাহাসা ইন্দোনেশিয়া' হল সরকারি ভাষা, যা মালয় উপভাষার একটি রূপ। এটি দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যবহার করে। তবে, জাভানিজ হল সবচেয়ে বেশি প্রচলিত প্রথম ভাষা, যা জনসংখ্যার ৩০% এর বেশি মানুষ ব্যবহার করে। ইন্দোনেশিয়ার এই ভাষাগত সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে এর দ্বীপপুঞ্জের ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা, যা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাষার স্বতন্ত্র বিকাশকে উৎসাহিত করেছে। প্রায় ৪,০০০-৫,০০০ বছর আগে তাইওয়ান থেকে আসা অস্ট্রোনেশিয়ান ভাষা পরিবার এই বৈচিত্র্যের একটি বড় অংশ গঠন করে।
নাইজেরিয়া, যার জনসংখ্যা ২১১ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে, সেখানে প্রায় ৫৩০টি ভিন্ন ভাষা প্রচলিত। এই ভাষাগুলিকে মূলত আফ্রো-এশিয়াটিক, নাইলো-সাহারান এবং নাইজার-কঙ্গো এই তিনটি প্রধান ভাষাগত গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়। যদিও ইংরেজি সরকারি ভাষা, তবে হাউসা হল সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষা, যার প্রায় ৩৫ মিলিয়ন স্থানীয় বক্তা রয়েছে। নাইজেরিয়ার এই ভাষাগত বৈচিত্র্য আফ্রিকার ভাষাগত চিত্রের একটি প্রতিচ্ছবি, যেখানে তিনটি প্রধান আফ্রিকান ভাষা পরিবার বিদ্যমান।
ভারত তার সংবিধানে ২২টি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা চারটি প্রধান ভাষাগত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। হিন্দি, যা সংস্কৃতের একটি উত্তরসূরী, এটি কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারি ভাষা এবং ইংরেজি একটি সহায়ক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রায় ৪১% ভারতীয় হিন্দি ব্যবহার করে, যা এটিকে বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক প্রচলিত প্রথম ভাষা করে তুলেছে। ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্য ঐতিহাসিক, ভৌগলিক এবং সাংস্কৃতিক কারণ দ্বারা প্রভাবিত। প্রায় ৪৪৩টি জীবিত ভাষা ভারতে প্রচলিত আছে, যেখানে ২২টি ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফসিলে স্বীকৃত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বহুভাষিক না হলেও, এখানে ৩৫০ টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত। ইংরেজির পরে স্প্যানিশ হল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা, যা প্রায় ৪৩.৩৭ মিলিয়ন মানুষ বাড়িতে ব্যবহার করে। এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮টি আদিবাসী ভাষা সংরক্ষণ করে। এই আদিবাসী ভাষাগুলি উত্তর আমেরিকার প্রধান ভাষা পরিবারগুলির অংশ, যদিও কিছু ভাষাগত বিচ্ছিন্নতাও রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, অনুমান করা হয় যে ২০৫০ সালের মধ্যে মাত্র ২০টি আদিবাসী ভাষা টিকে থাকবে।