ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্য কেবল একটি সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যই নয়, এটি জাতীয় ঐক্য ও সামগ্রিক উন্নয়নের এক শক্তিশালী ভিত্তি। সম্প্রতি শ্রীনগরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (NIT) আয়োজিত এক সেমিনারে লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি তুলে ধরেন। 'ভারতীয় ভাষাগুলিতে একাত্মতা' শীর্ষক এই আলোচনাচক্রটি ভাষাভিত্তিক সমন্বয় এবং জাতীয় সংহতির উপর আলোকপাত করে।
এই অনুষ্ঠানে সিনহা জোর দিয়ে বলেন যে, ভারতের শত শত ভাষা ও উপভাষা দেশের এক বিশাল শক্তি। তিনি বলেন, "বিভিন্ন পটভূমি, ভাষা, উপভাষা এবং ধারণা থাকা সত্ত্বেও, একটি সাধারণ জাতীয় পরিচয় এবং ভাগ করা চেতনা আমাদের সকলকে একত্রিত করে।" তিনি তরুণ প্রজন্মকে ভাষাগত ও আঞ্চলিক পার্থক্য ভুলে একটি 'বিকাশিত ভারত' (Developed India) গড়তে উৎসাহিত করেন। এই সেমিনারটি NIT শ্রীনগরের রাজভাষা সেল এবং ভারতীয় ভাষা সমিতির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল, যা হিন্দি পাখওয়াদা উদযাপনের অংশ ছিল। এই উদযাপনগুলির লক্ষ্য হল হিন্দি এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষার ব্যবহারকে উৎসাহিত করা।
NIT শ্রীনগরের ডিরেক্টর অধ্যাপক বিনোদ কুমার কানৌজিয়া ভাষাগত অন্তর্ভুক্তির প্রসারে রাজভাষা সেলের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং দ্বিপাক্ষিক নথিপত্রের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "ভারতীয় ভাষাগুলি কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এগুলি আমাদের সম্মিলিত ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের প্রতিফলন। এই সেমিনার ভাষাগত ঐক্যের আমাদের বোঝাপড়াকে গভীরতর করার এবং জাতীয় সংহতির মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে।"
এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলি ভারতের সমৃদ্ধ ভাষাগত ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে এবং তরুণ প্রজন্মকে এই বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে অনুপ্রাণিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ (NEP 2020) অনুযায়ী, ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় বহুভাষিকতাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যেখানে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এটি নিশ্চিত করে যে প্রতিটি শিক্ষার্থী, তাদের ভাষাগত পটভূমি নির্বিশেষে, উন্নতি করার এবং দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখার সুযোগ পায়।
ভাষার মাধ্যমে একতা স্থাপন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা ভারতের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এই বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে একটি শক্তিশালী ও সমন্বিত ভারত গড়ে তোলা সম্ভব, যা বিশ্ব মঞ্চে দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এই প্রচেষ্টাগুলি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে সহায়ক হবে।