ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সক্রিয়ভাবে নতুন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করছে। এই উদ্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মারকোসুর এবং মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিগুলো, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার একটি প্রয়াস। এপ্রিল ২০২৫-এ, ইইউ এবং মারকোসুর দেশগুলোর মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে শুল্ক হ্রাস এবং লাতিন আমেরিকার বাজারে ইউরোপীয় পণ্যের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি পাবে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল তৈরি করবে, যা প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং বিশ্ব জিডিপির প্রায় ২০% প্রতিনিধিত্ব করবে। একইভাবে, মে ২০২৫-এ, ইইউ এবং মেক্সিকোর মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তিটি উন্নত করা হয়েছে। এই নতুন চুক্তিতে ডিজিটাল বাণিজ্য, উৎপাদন এবং কৃষিখাত সম্পর্কিত নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যা অর্থনৈতিক সমন্বয়কে আরও গভীর করবে।
এই পদক্ষেপগুলোর পাশাপাশি, ইইউ তার ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট (DMA) এবং ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (DSA) কার্যকর করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এই আইনগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজারে 'বিগ টেক' কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রণীত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নিয়মাবলী নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিজিটাল ট্যাক্স বা আমেরিকান প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর উপর প্রভাব ফেলে এমন নিয়মাবলী প্রণয়নকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট তেরেসা রিবেয়া বলেছেন যে, ইইউ-এর উচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও তার ডিজিটাল নিয়মাবলী বজায় রাখা। তিনি ভোক্তা সুরক্ষা এবং নিয়ন্ত্রক স্বায়ত্তশাসন রক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলো ইউরোপীয় বাজার থেকে প্রচুর মুনাফা অর্জন করছে, কিন্তু তাদের একই আইন ও নিয়মাবলীর অধীনে থাকতে হবে যা অন্য যেকোনো অপারেটরের জন্য প্রযোজ্য।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইইউ-এর ডিজিটাল নিয়মাবলী মার্কিন কোম্পানিগুলোর উপর বছরে প্রায় ৯৭.৬ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ এবং রাজস্বের ক্ষতি চাপিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে কমপ্লায়েন্স খরচ বাবদ বছরে প্রায় ২.২ বিলিয়ন ডলার এবং জরিমানা ও শাস্তির ঝুঁকি বছরে ৪.৩ বিলিয়ন থেকে ১২.৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এই পরিস্থিতি transatlantic সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার নিজস্ব নীতিগুলি বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই উন্নয়নগুলো লাতিন আমেরিকার সাথে ইইউ-এর অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে। একই সাথে, ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জটিল বিষয়গুলো মোকাবিলা করছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক দিক নির্দেশ করে।