২০২৫ সালের প্রথমার্ধে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৯.১% হ্রাস পেয়ে ১০৬.৪৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এই বাণিজ্য হ্রাসের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞা, বিশেষ করে রাশিয়ার সামুদ্রিক রপ্তানির উপর, চীনের কাছ থেকে রাশিয়ার তেল আমদানিকে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে রাশিয়ার তেল রপ্তানির পরিমাণ ১১% এবং মূল্য ২৪% হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমে যাওয়াও চীনের ক্রয়ক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নীতি, যেমন আমদানিকৃত যানবাহনের উপর রিসাইক্লিং ফি বৃদ্ধি, যা প্রায় ৮৫% পর্যন্ত বেড়েছে, তা উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে আরও জটিল করে তুলেছে। এর প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ, একই সময়ে চীনে গাড়ি রপ্তানি ৬১% হ্রাস পেয়েছে।
এই পরিস্থিতি উভয় দেশের জন্যই একটি নতুন বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে, যেখানে তারা তাদের অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, চীন রাশিয়ার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে রয়ে গেছে। বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া তার অর্থনীতিকে সচল রাখতে চীনের উপর নির্ভরশীল।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় দেশই বাণিজ্য হ্রাসের প্রভাব মোকাবিলা করতে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে নতুন পথ খুঁজছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কৌশল হলো বার্টার ডিল বা পণ্য বিনিময় বাণিজ্য। আর্থিক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো এড়াতে এবং পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণের বাইরে লেনদেন সহজ করতে এই পদ্ধতিটি বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে। প্রায় ৩০ বছর পর এই ধরনের বাণিজ্য পদ্ধতির আলোচনা আবারও সামনে এসেছে, যা উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দৃঢ় ইচ্ছাকে নির্দেশ করে। স্থানীয় সরকারগুলোও এই নতুন বাণিজ্য বিন্যাসকে উৎসাহিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
এছাড়াও, রাশিয়া ও চীন প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা জোরদার করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছে। এই প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব কেবল অর্থনৈতিক সম্পর্ককেই শক্তিশালী করছে না, বরং ভূ-রাজনৈতিকভাবেও তাদের অবস্থানকে সুসংহত করছে। এই উদ্যোগগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বিদ্যমান প্রতিকূলতার মধ্যে উভয় দেশই তাদের সম্পর্ককে আরও গভীর ও স্থিতিশীল করার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
এই পরিবর্তনগুলো উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের কৌশলগত অবস্থানকে আরও মজবুত করছে।