গত ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার চালানো সর্ববৃহৎ বিমান হামলা, যেখানে ৮০০টিরও বেশি ড্রোন এবং ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল, তার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই হামলায় কিয়েভ সহ ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হানা হয়, যার মধ্যে কিয়েভের একটি সরকারি ভবন প্রথমবারের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হামলার পর ট্রাম্প রাশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির ইঙ্গিত দেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার আশা করছেন। এই বিধ্বংসী হামলাটি গত আগস্টে আলাস্কায় ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ব্যর্থ বৈঠকের পর রাশিয়ার আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধির একটি অংশ। সেই বৈঠকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
কিয়েভে সরকারি ভবনে হামলার পর সেখান থেকে আগুনের শিখা দেখা গিয়েছিল। এই ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কয়েকটি বহুতল ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়া বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে যে তারা কিয়েভের একটি কারখানা এবং একটি লজিস্টিকস সেন্টারকে আঘাত করেছে।
জেলেনস্কি তার সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে বলেন, পুতিন বিশ্বকে পরীক্ষা করছেন এবং তিনি মিত্রদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমরা আমেরিকার কাছ থেকে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছি। এটাই প্রয়োজন।' ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই হামলাকে রাশিয়ার যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া বলে অভিহিত করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এটিকে 'ভীরু' বলে নিন্দা করেছেন এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন ক্রেমলিনকে কূটনীতি নিয়ে উপহাস করার অভিযোগ করেছেন।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল ক্রয়কারী দেশগুলোর উপর শুল্ক আরোপ করতে পারে। তিনি বলেন, 'রাশিয়ার অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে। এবং এটি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসবে।' এই পদক্ষেপগুলো ২০২৫ সালের আগস্টে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ব্যর্থ বৈঠকের পর নেওয়া হচ্ছে, যা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আনেনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের পদক্ষেপ সমন্বয় করছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন ইউক্রেনকে সমর্থন এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
ইউক্রেনের পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে, রাশিয়ার আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংঘাতের উত্তেজনা থামাতে এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের সমর্থনে উপায় খুঁজছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা রাশিয়ার অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে, ভারত রাশিয়ার তেল কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছিল। এই ধরনের পদক্ষেপগুলো রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করে পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর কার্যকারিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।