জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (UNGA) এক গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা উপত্যকার যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য এই উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। এই আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান, যা একটি ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, গাজায় এ পর্যন্ত ৬৫,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং সমগ্র জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার ফলে ব্যাপকহারে অনাহার দেখা দিয়েছে। একাধিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ এবং জাতিসংঘের একটি তদন্ত সংস্থা এই পরিস্থিতিকে গণহত্যার সমতুল্য বলে মূল্যায়ন করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ তার দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন, যেখানে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী শরীফ তার বক্তব্যে ফিলিস্তিনের জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাবেন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ, ইসলামোফোবিয়া এবং টেকসই উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরবেন। তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা লাঘবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপের উপর জোর দেবেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশনের পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী শরীফ বিভিন্ন বিশ্বনেতাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। তিনি জাতিসংঘের সনদ সমুন্নত রাখা, সংঘাত প্রতিরোধ, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বৈশ্বিক সমৃদ্ধি উন্নয়নে পাকিস্তানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন। পাকিস্তান সম্প্রতি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল এবং অন্যান্য দেশ কর্তৃক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার যেসব দেশ এখনো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তান গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানায়। দেশটি অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জন্য পূর্ণাঙ্গ ও বাধাহীন মানবিক সহায়তারও আহ্বান জানিয়েছে। উপ-প্রধানমন্ত্রী দারের সম্মেলনে অংশগ্রহণ ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি পাকিস্তানের অটল সমর্থনের প্রতিফলন ঘটায়। পাকিস্তান একটি স্বাধীন, কার্যকর এবং অবিচ্ছিন্ন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে, যা ১৯ stava-র পূর্বের সীমান্ত এবং আল-কুদস আল-শরীফকে রাজধানী হিসেবে নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক বৈধতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।
এদিকে, জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন ইসরায়েলের গাজায় যুদ্ধকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং এর জন্য ইসরায়েলি সরকারকে দায়ী করেছে। কমিশনের মতে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা বাহিনী জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের দ্বারা নিযুক্ত স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের কাছে গণহত্যার পাঁচটি সংজ্ঞায়িত কাজের চারটি সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন, ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসের উদ্দেশ্যে জীবনযাত্রার শর্তাবলী আরোপ এবং জন্ম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। এই অভিযোগ ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হবে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পর্তুগাল তাদের দশকব্যাপী নীতি থেকে সরে এসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্সও সোমবার সৌদি আরবের সাথে যৌথভাবে আয়োজিত একটি সম্মেলনে এই স্বীকৃতি প্রদান করে। এই দেশগুলো দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের উপর জোর দিয়েছে, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ তার বক্তব্যে কাশ্মীর এবং ফিলিস্তিনের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো তুলে ধরবেন। তিনি গাজার মানবিক সংকটের উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করবেন এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানাবেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ, ইসলামোফোবিয়া এবং টেকসই উন্নয়নের মতো বিষয়গুলোতেও পাকিস্তানের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা গাজার মানবিক সংকট এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। এই আলোচনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।