যুক্তরাষ্ট্র প্রায় তিন দশক পর প্রথমবারের মতো কলম্বিয়াকে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ে ‘ডিসসার্টিফাই’ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত এই কূটনৈতিক পদক্ষেপটি প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর প্রশাসনের অধীনে ওয়াশিংটন ও বোগোতার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ইঙ্গিত দেয়।
এই সিদ্ধান্ত সরাসরি কলম্বিয়ায় কোকেইন উৎপাদনের ব্যাপক বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের (UNODC) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কলম্বিয়ায় কোকেইন উৎপাদন ৫৩% বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত দশ বছরে কোকা চাষ প্রায় তিনগুণ বেড়ে ২৫৩,০০০ হেক্টর জমিতে বিস্তৃত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পেত্রোর সরকার তার মাদক নিয়ন্ত্রণ কৌশল নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে। যদিও তিনি প্রগতিশীল মাদক নীতি সমর্থন করেছেন, তার প্রশাসন ফসল প্রতিস্থাপন কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করেছে এবং আকাশপথে ধোঁয়া দেওয়ার বিষয়টি পুনরায় চালুর কথা বিবেচনা করছে।
ডিসসার্টিফিকেশন সত্ত্বেও, মার্কিন প্রশাসন একটি ছাড়পত্র (waiver) জারি করেছে, যা কলম্বিয়াকে নির্দিষ্ট কিছু সহায়তা অব্যাহত রাখার অনুমতি দেয়। এই ছাড়পত্রের উদ্দেশ্য হলো কলম্বিয়ার উপর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রভাব হ্রাস করা, কারণ কলম্বিয়া এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র। তবে, এই ডিসসার্টিফিকেশনের কলম্বিয়ার অর্থনীতি ও নিরাপত্তার উপর গভীর প্রভাব রয়েছে। দেশটি জিডিপির ৬.৭% রাজস্ব ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্কিত সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন সহায়তা স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা এই বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও তীব্র করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায়, প্রেসিডেন্ট পেত্রো কলম্বিয়ার প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগের উপর জোর দিয়ে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেছেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর মার্কিন অভ্যন্তরীণ মাদকাসক্তি মোকাবিলার পদ্ধতির প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কলম্বিয়া সরকার ২০২৩ সালে ৮৮০ টন কোকেইন জব্দ করেছে, যা তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে, প্রেসিডেন্ট পেত্রো যুক্তি দিয়েছেন যে এই বিপুল পরিমাণ কোকেইন উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ তার সরকারের ব্যর্থতা নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মতো বৃহৎ ভোক্তা বাজারগুলোর চাহিদা। তিনি আরও বলেন যে, আকাশপথে ধোঁয়া দেওয়ার পরিবর্তে চাহিদা কমানো প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের (UNODC) ২০২৩ সালের বিশ্ব মাদক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী কোকেইন বাণিজ্য অভূতপূর্ব স্তরে পৌঁছেছে। উৎপাদন, জব্দ এবং ব্যবহার—সবই ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যার প্রধান চালিকাশক্তি হলো কলম্বিয়ায় অবৈধ কোকা ফসলের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী কোকেইন উৎপাদন ৩৭,০৮ টন রেকর্ড করেছে, যার মধ্যে কলম্বিয়ার অংশ ছিল বিশ্বব্যাপী কোকা পাতার ফসলের ৬৭% এর বেশি। এই বৃদ্ধি গত দশকের সর্বনিম্ন রেকর্ডের চেয়ে দশগুণ বেশি।
কলম্বিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে কোকা চাষের কেন্দ্রস্থলগুলো মূলত ২০১৬ সালের শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর না করা বিদ্রোহী এফএআরসি (FARC) গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যারা সহিংসতা ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে তাদের প্রভাব বজায় রেখেছে। অর্থনৈতিকভাবে, কলম্বিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে, যা জিডিপির ৬.৭% এ পৌঁছেছে। এই ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।