নিউইয়র্ক, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ – বিশ্বজুড়ে শান্তি ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রসারের লক্ষ্যে, মহামান্য অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্ক প্রথম আর্থাস আজ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
এই সাক্ষাৎকালে মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরাকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আসন্ন নভেম্বরের অর্থোডক্স সিনোডের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্যাট্রিয়ার্ক প্রথম আর্থাস মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিস্টানদের উপর ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন ও তাদের অস্তিত্বের সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলের প্রাচীন খ্রিস্টান সম্প্রদায়গুলি আজ বিপন্ন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সিরিয়া ও ইরাকে খ্রিস্টানদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে; ২০১১ সালে যেখানে ইরাকে প্রায় ১২ লক্ষ খ্রিস্টান ছিলেন, সেখানে ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা ১ লক্ষ ২০ হাজারে নেমে এসেছে। একইভাবে, সিরিয়াতেও এই সংখ্যা ১.৫ মিলিয়ন থেকে কমে ৩ লক্ষ হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে তিনি ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য কর্তৃক স্বীকৃত।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা এবং এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের প্রচেষ্টা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বিশ্বজুড়ে সংঘাত ও বিভেদ সৃষ্টি করছে। আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে সকল ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষ নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পারে।”
বৈঠকে আসন্ন অর্থোডক্স সিনোডের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয়, যা ২০২৫ সালের নভেম্বরে কনস্টান্টিনোপলে অনুষ্ঠিত হবে। প্যাট্রিয়ার্ক প্রথম আর্থাস সিনোডের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে মহাসচিবকে অবহিত করেন, যার মধ্যে অর্থোডক্সির ঐক্য, অন্যান্য খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সমসাময়িক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এই বৈঠকের শেষে, উভয় পক্ষ ধর্মীয় স্বাধীনতা, শান্তি এবং মানবাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে সহযোগিতার অঙ্গীকার জানিয়ে একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে। এই সাক্ষাৎটি ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা সহনশীলতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার বার্তা বহন করে। এই আলোচনাগুলি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। প্যাট্রিয়ার্ক প্রথম আর্থাসের এই সফর এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে তাঁর আলোচনা শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।