ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেরেলেস্কি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎস, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মতো ইউরোপীয় নেতাদের সাথে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ওয়াশিংটন ডিসিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অর্জন করা। এই আলোচনাটি পূর্ববর্তী একটি শীর্ষ সম্মেলনের পরবর্তী পদক্ষেপ, যা গত ১৫ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে আলাস্কার অ্যাঙ্করেজে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন সংকট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। যদিও আলাস্কার সেই সম্মেলনে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে শান্তির জন্য ইউক্রেনকে আঞ্চলিক ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
এই প্রস্তাবনা ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং ইউক্রেনীয় সরকারও রাশিয়ার অতীত চুক্তি লঙ্ঘনের (যেমন ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল) কারণে এই প্রস্তাবগুলোর ব্যাপারে সন্দিহান। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেরেলেস্কি বলেছেন যে, যুদ্ধের বর্তমান সীমান্ত রেখা শান্তি আলোচনার ভিত্তি হওয়া উচিত। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের জন্য 'আর্টিকেল ৫-এর মতো' নিরাপত্তা সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত, যা ন্যাটো জোটের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অনুরূপ। এই ধরনের সুরক্ষা ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা যুদ্ধের অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে, ইউক্রেন তার ভূখণ্ডের কোনো অংশ ছাড় দিতে রাজি নয়, যা তাদের সংবিধানের পরিপন্থী এবং আরও আগ্রাসনের পথ খুলে দিতে পারে। ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং রাশিয়ার আগ্রাসনকে পুরস্কৃত করে এমন কোনো ভূমি বিনিময়ের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে ইচ্ছুক সে সম্পর্কে আরও স্পষ্টতা চাইছেন। এই বৈঠকটি একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট প্রদর্শনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা ইউক্রেনকে তার স্বার্থ রক্ষায় সহায়তা করবে এবং অতীতের মতো কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করবে। ঐতিহাসিকভাবে, ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট স্মারকের অধীনে ইউক্রেন তার পারমাণবিক অস্ত্র রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছিল, যার বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্য তার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল এই প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়, যা ইউক্রেনের বর্তমান সন্দিহান মনোভাবের একটি কারণ। এই প্রেক্ষাপটে, আসন্ন বৈঠকটি ইউক্রেনের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।