ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য ৩৫ বিলিয়ন ইউরোর একটি ঋণ অনুমোদন করেছে, যা জব্দকৃত রাশিয়ান সম্পদের মুনাফা থেকে অর্থায়ন করা হবে। এই উদ্যোগটি বৃহত্তর জি৭ (G7) প্রতিশ্রুতির অংশ। এই ঋণের অনুমোদন অক্টোবর ২০২৪-এ সম্পন্ন হয়েছে এবং এটি অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে বিতরণ করা হবে। জি৭ দেশগুলো জুন ২০২৪-এ ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য একটি বৃহত্তর চুক্তিতে পৌঁছেছিল, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ঋণটি জি৭-এর এক্সট্রাঅর্ডিনারি রেভিনিউ অ্যাক্সিলারেশন (ERA) উদ্যোগের একটি অংশ, যার লক্ষ্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। এই উদ্যোগের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইতিমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে এবং বাকিটা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রত্যাশিত।
ইউরোপীয় কমিশন একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে যেখানে তারা শূন্য-কুপন ইইউ বন্ড (zero-coupon EU bonds) ইস্যু করবে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত গ্যারান্টি দ্বারা সমর্থিত হবে। এই বন্ডগুলো রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ থেকে উৎপন্ন সুদ-ভিত্তিক নগদ অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করা হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনকে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। আশা করা হচ্ছে যে রাশিয়া অবশেষে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবে, যা এই ঋণের চূড়ান্ত পরিশোধকে বিলম্বিত করবে।
জব্দকৃত রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ, যার পরিমাণ প্রায় ২০০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে ইইউ নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে। এই সম্পদগুলো ইউরোপীয় ডিপোজিটরি ইউরোকেয়ার (Euroclear) দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এগুলো বার্ষিক প্রায় ২.৫-৩ বিলিয়ন ইউরো আয় তৈরি করে। এই ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং এটি ইইউ-এর মধ্যে জব্দকৃত রাশিয়ান সম্পদের মুনাফা ব্যবহার করে পরিশোধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই আর্থিক সহায়তা ইউক্রেনের জরুরি আর্থিক চাহিদা মেটাতে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক ত্রাণ প্রদানের লক্ষ্যে ডিজাইন করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি ইউক্রেনের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে এবং এর পুনর্গঠন প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। এই ঋণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ইইউ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, যা অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং ইউক্রেনীয় অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক আর্থিক কূটনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য এবং উদ্ভাবনী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি ভবিষ্যতের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জব্দকৃত রাষ্ট্রীয় সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তার একটি নজির স্থাপন করতে পারে, যদিও এটি সম্পদ মালিকানা এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়ে জটিল আইনি ও অর্থনৈতিক প্রশ্ন উত্থাপন করে। জি৭ দেশগুলোর এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদী পুনরুদ্ধারের প্রতি ইইউ এবং জি৭-এর শক্তিশালী রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।