জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (UNFCCC) নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিল বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। এটি জ্বালানি ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে নতুন উদ্ভাবনী সমাধান তৈরিতে সহায়ক হবে। তবে, AI-এর বিশাল শক্তি চাহিদা এবং পরিবেশগত প্রভাবের কারণে এর উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।
স্টিল উল্লেখ করেছেন যে, AI মানব সক্ষমতাকে উন্নত করতে পারে, প্রতিস্থাপন করতে পারে না। এটি মাইক্রো-গ্রিড পরিচালনা, জলবায়ু ঝুঁকির পূর্বাভাস এবং স্থিতিশীল পরিকল্পনা তৈরিতে বাস্তব-বিশ্বের ফলাফল প্রদানে সক্ষম। তিনি আরও জানান যে, নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ গত দশ বছরে দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত বছর এই খাতে ২ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এই নবায়নযোগ্য শক্তির বিস্তার বিশ্বকে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে, AI প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের সাথে সাথে এর শক্তি ব্যবহারের পরিমাণও বাড়ছে। বড় ডেটা সেন্টারগুলির বিশাল শক্তি চাহিদা পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি সাধারণ AI কোয়েরি প্রচলিত সার্চের তুলনায় দশগুণ বেশি শক্তি ব্যবহার করতে পারে। এই বর্ধিত শক্তি চাহিদা কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
এই সমস্যা মোকাবিলায় AI মডেলগুলিকে আরও শক্তি-দক্ষ করে তোলা এবং ডেটা সেন্টারগুলিকে নবায়নযোগ্য শক্তি দ্বারা চালিত করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য নতুন সরকারি প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। যদিও কোম্পানিগুলি নিম্ন-কার্বন অর্থনীতির সুবিধাগুলি দেখতে পাচ্ছে, তবে সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাব এখনও সেভাবে পৌঁছায়নি।
জলবায়ু সংকটের প্রভাব দ্রুত বাড়ছে, তাই আরও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অনেক বড় অর্থনীতি এখনও প্যারিস চুক্তির অধীনে তাদের নতুন জাতীয় পরিকল্পনা জমা দেয়নি, যা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সুরক্ষার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই পরিস্থিতিতে, AI-এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এর শক্তি ব্যবহার এবং পরিবেশগত প্রভাবগুলিকেও বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এবং নীতি নির্ধারকদের উচিত AI-এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করা, যাতে এটি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হয় এবং পরিবেশের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব কম থাকে। এই প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটি মানবজাতির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।