ইউরোপীয় কমিশন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর বিকাশ এবং গ্রহণকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, 'Apply AI' কৌশল চালু করেছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা হ্রাস করে ইউরোপের ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা। স্বাস্থ্যসেবা, প্রতিরক্ষা এবং শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে AI-এর প্রয়োগ শক্তিশালী করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এই কৌশলটি বৃহত্তর 'AI Continent' অ্যাকশন প্ল্যানের অংশ, যা ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য, বিদ্যমান অর্থায়ন কর্মসূচি থেকে ৫০ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগে ২০০ বিলিয়ন ইউরো সংগ্রহ করা। এর মধ্যে চারটি «AI Gigafactories»-এর জন্য ২০ বিলিয়ন ইউরোর একটি নতুন তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, উন্নত কম্পিউটিং ক্ষমতা এবং জটিল AI মডেলগুলির বিকাশ ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে «AI Factories» এবং «AI Gigafactories» সহ অবকাঠামোগত সুবিধা তৈরি করা হবে। এছাড়াও, স্টার্টআপ, শিল্প এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সহায়তা করার জন্য ১৩টি AI কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার অধীনে, ইউরোপীয় AI গবেষণা পরিষদ (RAISE) প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নে AI বিকাশকারী এবং ব্যবহারকারী বিজ্ঞানীদের জন্য সম্পদ একত্রিত করবে। এর পাশাপাশি, প্রশিক্ষণ, প্রতিভা আকর্ষণ এবং শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে AI বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার উপরও আলোকপাত করা হয়েছে। শিক্ষামূলক কর্মসূচির সম্প্রসারণ এবং «AI Skills Academy» তৈরির মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশন দায়িত্বশীল এবং নৈতিক AI বিকাশের উপর জোর দিয়ে ইউরোপকে এই ক্ষেত্রে বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এই নীতিগুলি «AI Act»-এর মতো আইনে প্রতিফলিত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই উদ্যোগটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ইউরোপের প্রযুক্তিগত ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে এর অবস্থান শক্তিশালী করবে। নৈতিক এবং মানব-কেন্দ্রিক AI-এর উপর জোর দেওয়া দায়িত্বশীল উদ্ভাবনের প্রতি কমিশনের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
তবে, এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ইউরোপ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১৩.৫% ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান AI প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। প্রধান বাধাগুলির মধ্যে রয়েছে উপকরণের বিভাজন, দক্ষ কর্মীর অভাব, বাস্তবায়নের উচ্চ খরচ এবং নিয়ন্ত্রক অনিশ্চয়তা। তবে, এই কৌশলের সাফল্য নির্ভর করবে কার্যকর বাস্তবায়ন, পর্যাপ্ত তহবিল এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শীর্ষ AI প্রতিভা আকর্ষণ ও ধরে রাখার ক্ষমতার উপর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই 'Apply AI' কৌশলটি কেবল উন্নত AI তৈরি করাই নয়, বরং ইউরোপীয় মূল্যবোধ বজায় রেখে বিভিন্ন খাতে এর ব্যাপক এবং উপকারী গ্রহণ নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করবে। এই উদ্যোগটি ইউরোপের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।