আগামী ১ অক্টোবর, ২০২৫ থেকে চীন সরকার একটি নতুন 'কে-ভিসা' চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। এই ভিসা মূলত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (এসটিইএম) ক্ষেত্রের তরুণ বিদেশী পেশাদারদের আকৃষ্ট করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো বিশ্বমানের মেধা আকর্ষণ করে চীনের উদ্ভাবনী ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিভার জন্য একটি সহজ ও নমনীয় পথ তৈরি করা।
নতুন কে-ভিসা চীনের ১৩তম সাধারণ ভিসা ক্যাটাগরি হিসেবে যুক্ত হবে। এটি বিশেষত ৩৫ বছরের কম বয়সী এবং স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে এসটিইএম বিষয়ে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই ভিসার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এর জন্য কোনো নিয়োগকর্তার স্পনসরশিপ বা আমন্ত্রণপত্রের প্রয়োজন হবে না, যা আবেদন প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে তুলবে। কে-ভিসা ধারীরা চীনে শিক্ষা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। এই ভিসার মেয়াদ ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং এটি একাধিকবার প্রবেশের সুবিধা দেবে।
চীন সরকারের এই পদক্ষেপটি বিশ্বজুড়ে মেধাবী পেশাদারদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে একটি কৌশলগত চাল হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধি এবং কঠোর নিয়মকানুনের পরিপ্রেক্ষিতে, চীনের এই নতুন ভিসা নীতি অনেক প্রতিভাবান পেশাদারের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসার জন্য নতুন আবেদনকারীদের উপর প্রায় $১০০,০০০ বার্ষিক ফি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, চীন সরকার বিশ্ব মেধা প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে।
চীন সরকার তাদের 'ট্যালেন্ট পাওয়ার স্ট্র্যাটেজি' (Talent Power Strategy) এর অংশ হিসেবে এই কে-ভিসা চালু করছে। এর উদ্দেশ্য হলো দেশের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরও বাড়ানো এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব অর্জন করা। চীনের প্রযুক্তি খাত, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), বায়োটেকনোলজি, এবং সবুজ প্রযুক্তির মতো উদীয়মান ক্ষেত্রগুলিতে দক্ষতার ঘাটতি পূরণের জন্য এই ভিসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ভিসা নীতি কেবল মেধাবী পেশাদারদের আকৃষ্টই করবে না, বরং শিক্ষা, সংস্কৃতি, এবং গবেষণার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।
এই কে-ভিসা চীনের গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিভাদের জন্য একটি সমৃদ্ধ ইকোসিস্টেম তৈরি করবে। এই ভিসা প্রাপ্তির বিস্তারিত নির্দেশিকা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা আবেদনকারীদের জন্য প্রক্রিয়াটিকে আরও স্বচ্ছ করবে।