গিনিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাংবিধানিক গণভোটে ৯১.৪% ভোট পড়েছে, যা দেশটির নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে। এই গণভোটে ৯০.০৬% ভোট নতুন সংবিধানের পক্ষে এবং ৯.০৪% বিপক্ষে পড়েছে। এই নতুন সংবিধানের মাধ্যমে গিনির রাজনৈতিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সামরিক নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হওয়া।
নতুন সংবিধান অনুযায়ী, জেনারেল মামাদি ডৌম্বৌয়ার মতো সামরিক নেতারাও সরকারি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। ডৌম্বৌয়া ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়েছে, যা দুবার নবায়নযোগ্য। এছাড়াও, একটি সিনেটও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। এই পরিবর্তনগুলো গিনির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে জেনারেল ডৌম্বৌয়া প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আলফা কন্ডেকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। তিনি দেশের বিশৃঙ্খলা এড়ানো এবং পূর্ববর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছিলেন। যদিও ডৌম্বৌয়া প্রাথমিকভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার কথা বলেছিলেন, নতুন সাংবিধানিক কাঠামো সামরিক সদস্যদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ খুলে দিয়েছে। তবে, ডৌম্বৌয়া এখনও আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি। নির্বাচনটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
কিছু সমালোচক নতুন সংবিধানকে ক্ষমতা দখলের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা জেনারেল মামাদি ডৌম্বৌয়ার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার একটি উপায়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে গণভোট পরিচালনা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক দল এবং গণমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনাগুলি সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের স্বাধীনতা এবং অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ২০২২ সালে, গিনির সরকার প্রায় ৫০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করেছিল, যা রাজনৈতিক অঙ্গন পরিষ্কার করার একটি প্রচেষ্টা হিসাবে বর্ণিত হয়েছিল। গণভোটের কয়েক সপ্তাহ আগে, তিনটি প্রধান বিরোধী দলকেও স্থগিত করা হয়েছিল, যা তাদের সমাবেশ আয়োজন এবং জনসাধারণের সাথে সংযোগ স্থাপনে বাধা দিয়েছে।
গিনি পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর একটি প্রবণতার অংশ, যেখানে মালি, নাইজার এবং বুর্কিনা ফাসো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেখানে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে এবং ফ্রান্সের সাথে সম্পর্ক হ্রাস করে রাশিয়ার সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এই দেশগুলি তাদের প্রতিরক্ষা নীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশলে রাশিয়ার প্রভাব বাড়াতে আগ্রহী।
অর্থনৈতিকভাবে, গিনি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির অর্ধেকেরও বেশি (৫২%) জনসংখ্যা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, দেশটি একটি নতুন সাংবিধানিক পথে অগ্রসর হচ্ছে, যা দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে নতুন রূপ দেবে।