বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা সংক্রান্ত প্রবণতাগুলি দ্রুত জন্মহার হ্রাসের দিকে ইঙ্গিত করছে, যা ২০৫০ এবং ২১০০ সালের মধ্যে গভীর কাঠামোগত পরিবর্তন আনবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশকেই প্রভাবিত করছে, যার ফলে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক মডেলগুলি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। গত ছয় দশক ধরে, বৈশ্বিক জন্মহার জনসংখ্যার প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় সংকটজনক মাত্রা, অর্থাৎ প্রতি নারীর জন্য ২.১ সন্তানের (মোট প্রজনন হার) নিচে স্থিরভাবে রয়েছে।
এই জনমিতিক রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইউরোপ। ২০২৫ সালের মধ্যে ফ্রান্স, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো, বুলগেরিয়া এবং মলদোভার মতো বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য অপর্যাপ্ত হার প্রদর্শন করবে। জুন ২০২৫ সালে, ইলন মাস্ক উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে যদি জন্মহার প্রজনন স্তরে ফিরে না আসে, তবে এই মহাদেশ স্থায়ী জনসংখ্যা হ্রাসের মুখোমুখি হতে পারে।
একই বছর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মহার ১.৭ রেকর্ড করা হয়েছে, যা অভিবাসন বাদ দিলে ইতিমধ্যেই একটি জনসংখ্যার ঘাটতি নির্দেশ করে। আরও তীব্র চিত্র দেখা যায় চীনে, যেখানে এই হার কমে ১.২-এ দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ ইউরোপের জন্য পূর্বাভাস আরও উদ্বেগজনক: ২১০০ সালের মধ্যে নির্দিষ্ট অঞ্চলে জনসংখ্যা ২৬% হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলি অনিবার্যভাবে সামাজিক ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করবে। বয়স্ক জনসংখ্যার অংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় পেনশন বয়স সম্ভবত ৬৫ বছরের উপরে বাড়াতে হবে।
২০২৪ সালে 'দ্য ল্যানসেট' (The Lancet) জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা এই ব্যাপক প্রবণতাকে নিশ্চিত করেছে। এই তথ্য অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ জনসংখ্যা হ্রাসের সম্মুখীন হবে এবং ২১০০ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটি ৯৭% দেশে পৌঁছাবে। তবে এই জনমিতিক পরিবর্তনের একটি বিপরীত দিকও রয়েছে: যখন উন্নত দেশগুলি বার্ধক্যের দিকে ঝুঁকছে, তখন সাব-সাহারান আফ্রিকায় দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এই বৈপরীত্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে সম্পদের ন্যায্য বন্টন এবং বিভিন্ন জনমিতিক পরিস্থিতির মধ্যে সমন্বিত সহাবস্থানের শর্ত তৈরি করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করছে।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েছেন যে এই পরিণামগুলি প্রশমিত করার জন্য একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক নীতি প্রয়োজন। নতুন জনমিতিক বাস্তবতার দিকে মসৃণ রূপান্তর নিশ্চিত করতে এই নীতিতে অভিবাসন, শিক্ষা এবং সামাজিক সহায়তার বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই আন্তঃসম্পর্কগুলি বোঝার মাধ্যমে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে আরও টেকসই এবং আন্তঃসংযুক্ত বৈশ্বিক কাঠামো গঠনের সুযোগ খুঁজে পাওয়া যায়, যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক দিকনির্দেশনা দিতে পারে।