দীর্ঘদিনের বৈরিতা ও বিচ্ছিন্নতার পর, আর্মেনিয়া এবং পাকিস্তান অবশেষে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৫ সালের ৩১শে আগস্ট, চীনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (SCO) সম্মেলনের অবকাশে, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। এই পদক্ষেপটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে।
আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাফাত মিরজোয়ান এবং পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীishাক দার এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। এই কূটনৈতিক অগ্রগতির পূর্বে, ২৯শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে দুই মন্ত্রীর মধ্যে একটি টেলিফোনিক আলাপচারিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন। এই সম্পর্ক স্থাপন দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়েছে, কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পাকিস্তান বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের মধ্যে ছিল যারা আর্মেনিয়ার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। ঐতিহাসিকভাবে, পাকিস্তান আজারবাইজানকে নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাতে সমর্থন জুগিয়ে আসছিল, যা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে প্রধান অন্তরায় ছিল।
এই নতুন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ফলে উভয় দেশ জাতিসংঘের সনদের নীতি ও উদ্দেশ্যগুলির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং পর্যটনের মতো ক্ষেত্রগুলিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। উভয় পক্ষই দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ফোরামে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার এবং শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
এই কূটনৈতিক পদক্ষেপের পটভূমি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তি এই বরফ গলানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। এই চুক্তিটি দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতার অবসান ঘটিয়ে অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, পাকিস্তানের এই কূটনৈতিক উদ্যোগকে একটি কৌশলগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও অর্থনৈতিক সুযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে আঞ্চলিক শান্তি ও সহযোগিতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে। এই সম্পর্ক স্থাপন উভয় দেশের জনগণের জন্য শান্তি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি অর্জনের পথে একটি সম্মিলিত যাত্রার সূচনা করেছে, যা একটি উন্নত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করে।