ম্যাক্রোঁ কর্তৃক লেকর্নিউয়ের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ: ফ্রান্সের রাজনৈতিক পটভূমি

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সেবাস্টিয়ান লেকর্নিউকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ফ্রান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। লেকর্নিউ, যিনি পূর্বে সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের অন্যতম তরুণ সরকার প্রধান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার এই নিয়োগ ফ্রান্সের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

লেকর্নিউয়ের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো ২০২৬ সালের বাজেট প্রস্তুত করা। পূর্ববর্তী সরকার ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর একটি বাজেট প্রস্তাব করেছিল, যা সংসদীয় দলগুলোর সাথে আলোচনার পর সংশোধন করতে হবে। এই বাজেটটি ৭ই অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় পরিষদে জমা দিতে হবে। এছাড়াও, লেকর্নিউকে ফ্রান্সের কৃষি খাতের সংকট মোকাবেলা করতে হবে। সম্প্রতি প্রণীত ডুপ্লম্ব আইন (Duplomb law) নিয়ে ২.১ মিলিয়নেরও বেশি স্বাক্ষর সম্বলিত একটি পিটিশন জমা পড়েছে, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতীয় পরিষদ শীঘ্রই এই আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

শক্তির ক্ষেত্রে, লেকর্নিউকে বহু-বার্ষিক জ্বালানি কর্মসূচি (multi-year energy program) নিয়েও কাজ করতে হবে। এর লক্ষ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানো এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করা। এই পরিকল্পনার মধ্যে পারমাণবিক শক্তির পুনরুজ্জীবন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে, এই পরিকল্পনা নিয়ে কিছু রাজনৈতিক মহলে, বিশেষ করে ন্যাশনাল র্যালিমেন্ট (Rassemblement National) পার্টির সংসদ সদস্যদের মধ্যে, বিদ্যুতের বিল বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

লেকর্নিউয়ের নিয়োগের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো তার নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা করেছে। তবে, নতুন প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন পদ্ধতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা তার পূর্বসূরীর নীতি থেকে মৌলিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। লেকর্নিউ, যিনি ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি প্যারিস-অ্যাসাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক ল-তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি ন্যাশনাল জেন্ডারমারির একজন রিজার্ভ কর্নেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, ভার্ননের মেয়র, ইউর ডিপার্টমেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি এবং বিদেশী অঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০২২ সালে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।

ফ্রান্সের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কার্যকর শাসনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। লেকর্নিউয়ের নেতৃত্বে সরকার এই চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবেলা করে এবং দেশের ভবিষ্যৎ কোন পথে চালিত হয়, তা সময়ই বলে দেবে। তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং প্রেসিডেন্টের প্রতি আনুগত্য তাকে এই কঠিন সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে স্থাপন করেছে।

উৎসসমূহ

  • BFMTV

  • France's Macron names loyalist Lecornu as new prime minister

  • Sommet IA : « La France prend les devants » affirme Sébastien Lecornu

  • Sébastien Lecornu - Composition officielle du Gouvernement

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।