লুক্সেমবার্গের সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে এক ঐতিহাসিক ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৫ সালের ৩ অক্টোবর, গ্র্যান্ড ডিউক অঁরি ২৫ বছরের রাজত্ব শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন ত্যাগ করেছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হেরিডিটরি গ্র্যান্ড ডিউক গুইলাউমের পক্ষে। এই সিংহাসন ত্যাগের অনুষ্ঠানটি গ্র্যান্ড ডুcal প্যালেসে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়, যা ৭০ বছর বয়সী অঁরির রাজত্বের সমাপ্তি চিহ্নিত করে।
এর কিছুক্ষণ পরেই, সকাল ১১টায়, ৪৩ বছর বয়সী গুইলাউম চেম্বার অফ ডেপুটিজে শপথ গ্রহণ করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রের নতুন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর সিংহাসন বক্তৃতাও প্রদান করেন। এই উত্তরাধিকার লুক্সেমবার্গের রাজপরিবারের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুসরণ করে, যেখানে গ্র্যান্ড ডিউক জ্যাঁ ২০০০ সালে অঁরির পক্ষে এবং গ্র্যান্ড ডাচেস শার্লট ১৯৬৪ সালে জ্যাঁর পক্ষে সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন।
অঁরির সিংহাসন ত্যাগের ঘোষণাটি ২০২৪ সালের ২৩ জুন তাঁর বড়দিনের ভাষণে দেওয়া হয়েছিল, যা প্রস্তুতির জন্য এক বছরেরও বেশি সময় দিয়েছিল। উত্তরাধিকারী গ্র্যান্ড ডিউক গুইলাউমকে ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর লেফটেন্যান্ট-প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, যা তাঁর ভবিষ্যতের শাসনের জন্য প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এই পরিবর্তন লুক্সেমবার্গের ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতার প্রতি অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। গ্র্যান্ড ডিউক অঁরি পরবর্তী প্রজন্মের উপর আস্থা প্রকাশ করেছেন, যারা জাতিকে আরও শান্তিপূর্ণ ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামের রাজপরিবার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টাইনমায়ারের মতো অনেক বিশিষ্ট অতিথি উপস্থিত ছিলেন, যা ইউরোপীয় মঞ্চে লুক্সেমবার্গের গুরুত্ব তুলে ধরে। নতুন গ্র্যান্ড ডিউক গুইলাউম, যিনি ১৮১৫ সালে লুক্সেমবার্গ একটি গ্র্যান্ড ডাচি হওয়ার পর থেকে দশম সার্বভৌম, তিনি দেশকে এক নতুন যুগে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর স্ত্রী, গ্র্যান্ড ডাচেস স্টেফানিও এই নতুন ভূমিকায় তাঁকে সমর্থন করতে প্রস্তুত। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র, প্রিন্স চার্লস, যিনি ২০২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন, এখন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। তাঁদের দ্বিতীয় পুত্র হলেন প্রিন্স ফ্রাঁসোয়া, যিনি ২০২৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন, এবং তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারের সারিতে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
লুক্সেমবার্গের উত্তরাধিকার আইন ২০১১ সালে পরিবর্তিত হয়েছে, যেখানে অ্যাগনেটিক প্রাইমোজেনiture-এর পরিবর্তে অ্যাবসোলিউট প্রাইমোজেনiture চালু করা হয়েছে, যা লিঙ্গ নির্বিশেষে জন্মক্রমের ভিত্তিতে উত্তরাধিকার নিশ্চিত করে। এই সিংহাসন ত্যাগ এবং নতুন সম্রাটের দায়িত্ব গ্রহণ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসবের মাধ্যমে পালিত হয়েছে, যা জাতির গর্ব এবং রাজপরিবারের প্রতি জনগণের সমর্থন প্রতিফলিত করে। এই ঘটনা কেবল নেতৃত্বের পরিবর্তনই নয়, বরং এটি একটি উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতাও নির্দেশ করে, যেখানে নতুন গ্র্যান্ড ডিউক লুক্সেমবার্গকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত।