কায়রোতে ইরান এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যার লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে পরিদর্শনের সম্ভাব্য পুনরুজ্জীবন সহ সহযোগিতা পুনঃস্থাপন করা। এই সমঝোতাটি IAEA-র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি-র মধ্যে নিবিড় কূটনৈতিক আলোচনার ফলস্বরূপ সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে মিশরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলআত্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই চুক্তিটি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই ঘটনাটি পূর্ববর্তী উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির পর এসেছে, যা জুন ২০২৫-এ ইসরায়েলি ও আমেরিকান বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে আঘাত হানার ঘটনা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। এই বিমান হামলাগুলি পারমাণবিক কর্মসূচির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল। এই পদক্ষেপগুলির প্রতিক্রিয়ায় এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে, ইরান জুলাই ২০২৫-এ IAEA-র সাথে তার সহযোগিতা স্থগিত করেছিল এবং পরিদর্শনের জন্য নতুন শর্তাবলী আরোপ করেছিল। এই স্থগিতাদেশ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির স্বচ্ছতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল, কারণ এটি সংস্থাটিকে দেশটির পারমাণবিক কার্যকলাপের উপর নজরদারি করতে বাধা দিচ্ছিল।
এই চুক্তিটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল সময়ে এসেছে, কারণ ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য ইরানের উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। এই পদক্ষেপটি ইরানের পারমাণবিক চুক্তি মেনে না চলা এবং ইউরেনিয়ামকে ৬০% বিশুদ্ধতায় সমৃদ্ধ করার চলমান প্রক্রিয়ার কারণে নেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালের জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (JCPOA) চুক্তিটি মূলত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সীমিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই চুক্তিটি নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছে। ১৩ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত, ইরান আনুমানিক ৪৪০.৯ কিলোগ্রাম এই উচ্চ-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করেছিল, যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন অস্ত্র-গ্রেড উপাদানের (৯০% বিশুদ্ধতা) কাছাকাছি একটি প্রযুক্তিগত ধাপ। এই মাত্রার সমৃদ্ধি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ইউরোপীয় দেশগুলি সতর্ক করেছিল যে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং সহযোগিতা পুনরায় শুরু করতে ব্যর্থ হলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা হতে পারে, যা ইরানের অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি করবে। নতুন স্বাক্ষরিত প্রযুক্তিগত চুক্তিটি ইরানের নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তা উদ্বেগগুলি সমাধান করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, পাশাপাশি IAEA-কে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির উপর পূর্ণ প্রবেশাধিকার প্রদান করবে। IAEA মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জোর দিয়ে বলেছেন যে এই চুক্তি ইরানের সমস্ত পারমাণবিক কেন্দ্রে পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে এবং পূর্বে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলিতে পারমাণবিক উপাদানের বিষয়ে ইরানকে প্রতিবেদন জমা দিতে বাধ্য করবে। তিনি বলেন, এটি অপরিহার্য পরিদর্শন কাজের জন্য একটি সঠিক পদক্ষেপ, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কতার সাথে এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এর দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে, যা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তেহরান একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা জারি করেছে: যেকোনো প্রতিকূল কাজ, যেমন জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা হলে, তা এই চুক্তিকে বাতিল বলে গণ্য করা হবে। এটি ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত, এবং এই চুক্তিটি কার্যকর থাকার জন্য উভয় পক্ষেরই পারস্পরিক আস্থা ও সম্মতির প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই চুক্তিটি আস্থা পুনরুদ্ধারের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উল্লেখযোগ্য মজুত আন্তর্জাতিক উদ্বেগের একটি বিষয় রয়ে গেছে। IAEA-র পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাইকরণের ক্ষমতা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ প্রকৃতি নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চুক্তির সাফল্য নির্ভর করবে এর সতর্ক বাস্তবায়ন এবং বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করার ক্ষমতার উপর। ভবিষ্যতের পথটি সংলাপ ও স্বচ্ছতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতার দাবি রাখে, যা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করবে যেখানে অভিন্ন নিরাপত্তা স্বার্থগুলি গঠনমূলকভাবে সমাধান করা যেতে পারে এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। এই ধরনের চুক্তিগুলি কেবল রাষ্ট্রীয় স্তরেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে শান্তি ও বোঝাপড়ার একটি বৃহত্তর চিত্র তুলে ধরে।