ইউরোপ জুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একটি 'স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা' ঘোষণা করেছে। এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি মহাদেশটিতে পূর্বে বিরল রোগের বিস্তার এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। WHO-এর তথ্য অনুসারে, গত দুই দশকে তাপজনিত কারণে মৃত্যু ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে এবং আগামী বছরগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ইউরোপের সংক্রামক রোগের চিত্র পরিবর্তন করছে এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইউরোপে এমন সব রোগের বিস্তার ঘটছে যা পূর্বে এখানে দেখা যেত না। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ ৩৬৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপপ্রবাহের সময় জরুরি বিভাগে রোগীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা এবং কিডনি সংক্রান্ত অসুস্থতার জন্য।
মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও তাপপ্রবাহের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ঘুমের ব্যাঘাত, উদ্বেগ বৃদ্ধি এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার মতো সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তারা হিটস্ট্রোক এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকিতে বেশি। কিছু প্রেসক্রিপশনের ওষুধ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাধা দিতে পারে, যা এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, নির্দিষ্ট কিছু পেশার শ্রমিকরা, যারা বাইরে কাজ করেন, তারা হিটস্ট্রোক এবং অবসাদের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং ইউরোপ জুড়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে, ইউরোপে প্রায় ৪৭,০০০ মানুষ তাপজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই সংখ্যাটি গত দশকের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে গ্রীস, বুলগেরিয়া, ইতালি, স্পেন, সাইপ্রাস এবং পর্তুগালের মতো দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশগুলিতে তাপজনিত মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। মহিলাদের এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই তাপপ্রবাহের ঘটনাগুলি আরও ঘন ঘন, তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। এর ফলে, ইউরোপের বয়স্ক জনসংখ্যা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর তাপের প্রভাব আরও বাড়বে। এই সংকট মোকাবিলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।