ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্ডার অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন ইন লিবিয়া (EUBAM) লিবিয়ার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং সীমান্ত অপরাধ মোকাবেলায় দেশটির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তার সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি ত্রিপোলিতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম যৌথ কমিটি সভায় মিশনের বর্ধিত ম্যান্ডেট পর্যালোচনা করা হয় এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার রূপরেখা তৈরি করা হয়। এই মিশনটি লিবিয়ার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা জোরদার করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, যা এই অঞ্চলের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
EUBAM লিবিয়ার ম্যান্ডেট আরও দুই বছরের জন্য, অর্থাৎ ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই বর্ধিত সময়ের জন্য প্রায় ৫২ মিলিয়ন ইউরোর একটি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। এই অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো লিবিয়ার কর্তৃপক্ষকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে এবং মানব পাচার, অভিবাসী চোরাচালান ও সন্ত্রাসবাদের মতো সীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করা। মিশনের প্রধান জ্যান ভিচিটাল এই উদ্যোগের প্রতি তাদের অবিচল প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি বিশেষ করে লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত বরাবর সক্ষমতা ও অবকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছেন। সামুদ্রিক ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও উদ্ধার (SAR) সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ফরেনসিকসহ সীমান্ত অপরাধ দমনে সহযোগিতার গুরুত্বও তিনি তুলে ধরেন। লিবিয়ার কর্তৃপক্ষকে মিশনের পরামর্শমূলক দক্ষতা কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মান ও সর্বোত্তম অনুশীলনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
লিবিয়ার সীমান্ত পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং। দেশটি প্রায় ৪,৩৪০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত এবং ১,৭৭০ কিলোমিটার সমুদ্র সীমান্ত নিয়ে গঠিত, যা অত্যন্ত বিস্তৃত ও অরক্ষিত। ২০১১ সালের বিপ্লবের পর থেকে দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক বিভেদ এবং শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকে আরও কঠিন করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে অস্ত্র, মানব পাচার এবং অবৈধ পণ্যের ব্যবসা সহজ হয়েছে, যা সমগ্র অঞ্চল জুড়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকাগুলোতে সরকারি উপস্থিতি এবং অবকাঠামোর অভাব এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিভিন্ন উপজাতিগত সম্পর্ক এবং স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাবও সীমান্ত নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে।
এই প্রেক্ষাপটে, EUBAM-এর মতো মিশনের কার্যক্রম লিবিয়ার সীমান্ত সুরক্ষাকে শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। EUBAM লিবিয়া ২০০১৩ সালের মে মাস থেকে কাজ করছে এবং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাধারণ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতি (CSDP)-এর অধীনে একটি বেসামরিক মিশন। এর মূল কাজ হলো লিবিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যাতে তারা দেশের সীমান্ত পরিচালনা করতে, সীমান্ত অপরাধ (যেমন মানব পাচার ও অভিবাসী চোরাচালান) মোকাবেলা করতে এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করতে পারে। মিশনটি কৌশলগত ও কার্যক্ষম পর্যায়ে লিবিয়ার অংশীদারদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ এবং মেন্টরিং প্রদান করে। এটি মানবাধিকার এবং লিঙ্গ সমতা অন্তর্ভুক্তির উপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
উভয় পক্ষই আগামী ডিসেম্বরের শুরুতে পরবর্তী যৌথ কমিটি সভার আয়োজন করতে সম্মত হয়েছে, যেখানে বর্তমান অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। তবে, এই সহযোগিতার কিছু সমালোচনাও রয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (NGO) যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং লিবিয়ার মধ্যেকার এই অংশীদারিত্বের মানবাধিকারগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের আটক, নির্যাতন, শোষণ এবং পাচারের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। কিছু প্রতিবেদনে Frontex-এর মতো ইউরোপীয় সংস্থার ভূমিকার উপরও প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যেখানে তাদের কার্যক্রম অভিবাসী আটকের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সংস্থাগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিগুলোর পুনর্বিবেচনা এবং অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার উপর জোর দিয়েছে, যাতে কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে।
এই উদ্বেগ সত্ত্বেও, EUBAM লিবিয়ার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে তার ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে, যা একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টা।