ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং আংশিক বাণিজ্য স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, "গাজায় যা ঘটছে তা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে।"
ফন ডার লেয়েন গাজায় যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ব্যবহারের নিন্দা করে অবিলম্বে এটি বন্ধ করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২২ আগস্ট গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণার পর থেকে অপুষ্টিতে ১২৬ জন ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে ২৬ জন শিশুও রয়েছে, মারা গেছে। অতিরিক্ত তথ্য অনুসারে, আগস্ট মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে, ৫,৮৯৪ জন শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত বলে জানা গেছে, যার মধ্যে ১,৮৪০ জন গাজা শহরে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে যে, যাচাইকৃত মৃত্যুর প্রায় ৭০% নারী ও শিশু, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মৌলিক নীতিগুলির একটি পদ্ধতিগত লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের জন্য দ্বিপাক্ষিক সহায়তা স্থগিত করা, তবে নাগরিক সমাজ এবং ইয়াদ ভাশেমের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা এর আওতার বাইরে থাকবে। এছাড়াও, উগ্রপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রী এবং ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তির আংশিক স্থগিতাদেশ, বিশেষ করে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, বিবেচনাধীন রয়েছে। এই প্রস্তাবগুলি অভ্যন্তরীণভাবে ইইউ-এর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, যেখানে জার্মানি এবং হাঙ্গেরির মতো দেশগুলি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের বিরোধিতা প্রকাশ করেছে। ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দ্বারা এই নিষেধাজ্ঞাগুলির অনুমোদন অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
সংঘাত শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে, যখন হামাস-নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, ইসরায়েলের পরবর্তী আক্রমণে ৬৪,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, যা দেশটির মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এই বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করা হলে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে। ইউরোপীয় কমিশন আগামী মাসে একটি ফিলিস্তিনি দাতব্য গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে, যা গাজার পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।