তিয়ানজিন, চীন – সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) ২৫তম শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সংস্থার বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের জন্য নতুন প্রস্তাবনা পেশ করেছেন, যার মধ্যে একটি এসসিও-পরিচালিত উন্নয়ন ব্যাংক স্থাপন এবং একটি আন্তর্জাতিক জ্বালানি সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম চালু করার পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করা অন্তর্ভুক্ত। চীন সদস্য রাষ্ট্রগুলির জন্য তিন বছরে ১.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।
এই সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অংশগ্রহণ করেন। পুতিন শি জিনপিংয়ের নতুন বিশ্ব শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ধারণাকে সমর্থন জানিয়েছেন। চীন, রাশিয়া এবং ভারতের মধ্যেকার ঐক্য এই সম্মেলনে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে, যেখানে ২০টিরও বেশি অ-পশ্চিমা দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শি জিনপিং মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা কমাতে একটি নতুন এসসিও উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিকল্প বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। পুতিন এসসিও-কে 'প্রকৃত বহুপাক্ষিকতার' পুনরুজ্জীবন এবং একটি নতুন ইউরেশীয় নিরাপত্তা মডেলের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন।
সম্মেলনটি চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। শি এবং মোদী একটি অভিন্ন উন্নয়ন পথের বিষয়ে একমত হয়েছেন। মোদী এবং পুতিনের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
এই সম্মেলনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের সাথে মিলে যায়, যা চীন তার যুদ্ধের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করতে এবং তাইওয়ানের উপর তার দাবি জোরদার করতে ব্যবহার করছে। সম্মেলনে একটি সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পশ্চিমা বিশ্ব কর্তৃক প্রায়শই বর্জিত দেশগুলির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সম্মেলন এবং শি জিনপিংয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট চীনের বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বকে উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে তুলে ধরার এবং অভ্যন্তরীণ বৈধতা শক্তিশালী করার একটি প্রচেষ্টা। পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা এই সামরিক শক্তি প্রদর্শন এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ জোটকে বেইজিংয়ের স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন।
তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এসসিও শীর্ষ সম্মেলনটি বিশ্ব ব্যবস্থা পরিবর্তনের চীনের প্রচেষ্টায় একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলি বহুপাক্ষিকতা এবং পশ্চিমা-নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এই সম্মেলনে ভারত ও চীনের মধ্যেকার সম্পর্ক উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এসসিও-র সদস্য দেশগুলি তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে এবং একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।