ইউক্রেন জুড়ে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রয়েছে, যা দেশটির বেসামরিক অবকাঠামো ও জ্বালানি কেন্দ্রগুলিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর প্রথম দিকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া প্রায় ৫০২টি ড্রোন এবং ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই ধারাবাহিক হামলায় অন্তত একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। বিশেষভাবে, চেরনিহিভ ও ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক অঞ্চলের জ্বালানি পরিকাঠামো লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে, যা জনজীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
এই কঠিন সময়ে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি ডেনমার্কে উত্তর ইউরোপ ও বাল্টিক দেশগুলির নেতাদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এরপর তিনি প্যারিস সফরের পরিকল্পনা করছেন, যেখানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সাথে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করবেন। এই কূটনৈতিক তৎপরতাগুলি 'coalition of the willing' বা ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট গঠনের একটি অংশ, যা শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের প্রয়াসকে শক্তিশালী করবে।
এই আক্রমণগুলি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বেইজিং সফর এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়িয়ে চীন রাশিয়ার জন্য দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য (dual-use) পণ্যের একটি প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছে। ২০২৪ সালে চীন রাশিয়াকে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের এমন পণ্য সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে নেভিগেশন সিস্টেম, জ্যামিং প্রযুক্তি এবং ফাইটার জেটের যন্ত্রাংশ উল্লেখযোগ্য। এই সরবরাহগুলি রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে শক্তিশালী করছে এবং ইউরোপীয় প্রযুক্তি রাশিয়ায় পৌঁছানোর একটি মাধ্যম হিসেবেও কাজ করছে, যা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, রাশিয়া তৃতীয় দেশগুলির মাধ্যমে, বিশেষ করে চীনের সহায়তায়, এই বিধিনিষেধগুলি এড়িয়ে চলেছে। ন্যাটোর বিশ্লেষকদের মতে, চীন রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে 'সিদ্ধান্তমূলকভাবে সক্ষম' করছে। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলেছে। ক্রমবর্ধমান আক্রমণগুলি কেবল ধ্বংসযজ্ঞই নয়, বরং প্রতিকূলতার মুখে মানবজাতির সহনশীলতা এবং সম্মিলিতভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগও তৈরি করে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি জটিল জাল তৈরি করে, যেখানে প্রতিটি দেশের পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতিতে, কূটনৈতিক আলোচনা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ নির্মাণই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। চীন কর্তৃক দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য পণ্যের সরবরাহ এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফাঁকফোকরগুলি বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গভীর চিন্তার বিষয়।