ভ্যাটিকান সিটি: মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত, বিশেষ করে গাজা উপত্যকার করুণ পরিস্থিতি এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনার জন্য পোপ লিও চতুর্দশ এবং ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ভ্যাটিকানে এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হন। এই ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকালে, পোপ লিও চতুর্দশ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল গাজার মানবিক সংকট। তিনি জিম্মিদের মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশাধিকার এবং উভয় জনগণের বৈধ আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আলোচনা পুনরায় শুরু করার গুরুত্বের উপর জোর দেন।
ভ্যাটিকান দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে চলমান যুদ্ধের একমাত্র পথ হিসেবে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে এবং পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করে। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় চার্চের মধ্যে সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানব ও সামাজিক উন্নয়নে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভূমিকার কথাও উঠে আসে।
প্রেসিডেন্ট হারজোগ হামাস কর্তৃক জিম্মি করে রাখা ইসরায়েলিদের মুক্তির জন্য ইসরায়েলের প্রচেষ্টা তুলে ধরেন। তিনি জিম্মিদের এবং তাদের পরিবারের উপর চলমান বিপদ সম্পর্কে আলোকপাত করেন এবং তাদের অবিলম্বে মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও জোরদার প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। তিনি ধর্মীয় নেতাদেরও এই আহ্বানে শামিল হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
বৈঠকে বিশ্বব্যাপী ইহুদি-বিদ্বেষের (antisemitism) ক্রমবর্ধমান হার, মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে খ্রিস্টান ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের সুরক্ষা এবং ইসরায়েল, জুডিয়া, সামারিয়া ও গাজায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কল্যাণ নিয়েও আলোচনা হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর থেকে প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে ইহুদি-বিদ্বেষী ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ইহুদি-বিদ্বেষী ঘটনার সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ৩৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হারজোগ পোপ লিও চতুর্দশকে অভ্যর্থনার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং পবিত্র ভূমি ও ইসরায়েলের মধ্যেকার সম্পর্কের গুরুত্ব ও আলোচিত বিষয়গুলির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। তিনি পোপকে ইসরায়েল সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা পবিত্র ভূমিতে তাকে স্বাগত জানাতে এক বিরাট সুযোগ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই সাক্ষাৎটি পবিত্র ভূমি ও ইসরায়েলের মধ্যেকার সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও সহযোগিতার প্রতি নবায়নকৃত অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এই আলোচনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত নিরসনে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপের ইঙ্গিত বহন করে।