জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনের শুরুতে যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করা এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং গাজায় মানবিক সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন যে এই পদক্ষেপ একটি নৈতিক দায়িত্ব, যা শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। তিনি গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি এবং চলমান সংঘাতের কথা উল্লেখ করেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার জোর দিয়ে বলেছেন যে হামাস একটি "নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী সংগঠন" এবং ফিলিস্তিনের ভবিষ্যতে তাদের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত নয়। ফ্রান্সও একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এই স্বীকৃতিকে সংঘাতের জন্য "সহায়ক নয়" বলে মন্তব্য করেছেন, যা এই পদক্ষেপের সময়োপযোগিতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এই স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রধান পশ্চিমা দেশগুলোর এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির বিরোধিতা করে বলেছেন যে এটি "সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করে" এবং হামাসের "বন্দীদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতিকে আরও কঠিন করে তোলে"। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ফ্রান্সের অঙ্গীকার এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি সমর্থন হিসেবে অভিহিত করেছে। হামাসও ম্যাক্রোঁর ঘোষণাকে "ইতিবাচক পদক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছে এবং সকল দেশকে একই কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে, প্রায় ১৪০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো জি৭ (G7) অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের এই স্বীকৃতি কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে, জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ পেতে হলে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই স্বীকৃতির ফলে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি একটি শক্তিশালী নৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গীকার প্রদর্শিত হয়েছে, বিশেষ করে যখন এই ধারণাটি হুমকির মুখে পড়েছে। যদিও এই পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক প্রভাব সীমিত হতে পারে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ঘটনাটি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট এবং এর সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টার একটি প্রতিফলন।