দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক অফ কোরিয়া (BOK)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩.৭% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ মূলত উৎপাদন, নির্মাণ এবং খনি শিল্পের উন্নতির পাশাপাশি রাশিয়ার সাথে বর্ধিত অর্থনৈতিক সহযোগিতার দ্বারা চালিত হয়েছে। এই বৃদ্ধি ২০২৩ সালের ৩.১% প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে এবং ২০২২ সালের ০.২% সংকোচনের পর একটি ইতিবাচক মোড় নির্দেশ করে।
২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়ার শিল্পখাতে একটি শক্তিশালী কর্মক্ষমতা দেখা গেছে। বিশেষ করে, উৎপাদন খাত ৭.০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খনি শিল্প ৮.৮% বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯৯ সালের পর থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান দেখিয়েছে। নির্মাণ খাতও ১২.৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত আবাসিক ভবন নির্মাণে জোর দেওয়ার ফল। এর মধ্যে, ভারী রাসায়নিক শিল্পে ১০.৭% অভূতপূর্ব বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা রাশিয়ার কাছে রপ্তানির জন্য অস্ত্র-সম্পর্কিত ধাতব পণ্যের বর্ধিত উৎপাদনের সাথে সরাসরি যুক্ত।
এই অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের পেছনে দুটি প্রধান চালিকাশক্তি কাজ করেছে। প্রথমত, উত্তর কোরিয়া অভ্যন্তরীণভাবে জাতীয় নীতি প্রকল্পগুলি সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ২০x১০ নীতি। এই নীতিগুলি দেশের শিল্প ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার সাথে উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সম্পর্কটি কেবল বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে রাশিয়ার সামরিক চাহিদাও পূরণ করেছে, যা উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করেছে।
যদিও শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, উত্তর কোরিয়ার সামগ্রিক বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২.৬% হ্রাস পেয়ে ২.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে, রপ্তানি ১০.৮% বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে প্রসাধনী এবং ঘড়ির মতো পণ্যগুলি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে, আমদানি ৪.৪% কমে ২.৩৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়ের (GNI) দিক থেকে, উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের আয় মাত্র ১,২৩৯ ডলার, যা দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয়ের মাত্র ৩.৪%। এটি দুই কোরিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বিশাল অর্থনৈতিক বৈষম্যকে তুলে ধরে। এই প্রবৃদ্ধি উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়কে চিহ্নিত করে, যা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং বিচ্ছিন্নতার মুখেও তার কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে টিকে থাকার এবং বিকাশের ক্ষমতা প্রদর্শন করে। রাশিয়ার সাথে ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে, দেশটির অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করেছে।
সামগ্রিকভাবে, ২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়ার ৩.৭% অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশটির উৎপাদন, খনি এবং নির্মাণ খাতের শক্তিশালী কর্মক্ষমতা এবং রাশিয়ার সাথে বর্ধিত সহযোগিতার একটি সম্মিলিত ফলাফল। এই অর্জনগুলি দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার একটি প্রয়াসকে প্রতিফলিত করে, যা আগামী দিনে দেশটির অর্থনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।