ইরানের পারমাণবিক চুক্তি: ইউরোপীয় শক্তিধর দেশগুলোর সাথে আলোচনায় তেহরানের আগ্রহ এবং নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

সম্পাদনা করেছেন: gaya ❤️ one

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি ইউরোপীয় শক্তিধর দেশগুলোর (ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানি) সাথে একটি পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য তেহরানের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। এই চুক্তির আওতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সীমাবদ্ধতা এবং কঠোর পরিদর্শনের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই বিবৃতিটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করেছে, যা অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

আরাকচি রবিবার 'দ্য গার্ডিয়ান' পত্রিকায় প্রকাশিত এক মতামত কলামে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত 'আইনিভাবে ভিত্তিহীন' এবং এটি একটি 'গুরুতর ভুল'। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা না করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তিনি ইউরোপীয় সরকারগুলোকে 'ওয়াশিংটনের কৌশল অন্ধভাবে অনুসরণ' করার অভিযোগ করেন এবং তাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করেন। আরাকচি আরও বলেন, ইউরোপের এই নিষ্ক্রিয়তা আঞ্চলিক কূটনীতিতে তাদের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি ইরানের পারমাণবিক পরিদর্শনের বিষয়ে দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আলোচনা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। উল্লেখ্য, জুন মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর থেকে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের তথ্য IAEA-এর কাছে নেই। ইরান একটি নতুন আইন পাশ করেছে যার অধীনে যেকোনো পরিদর্শনের জন্য দেশটির সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। IAEA-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান প্রায় অস্ত্র-গ্রেডের কাছাকাছি (৬০% পর্যন্ত) ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার কাছাকাছি। এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম আরও সমৃদ্ধ করা হলে তা একাধিক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, চীন ও রাশিয়া ইউরোপীয় দেশগুলোর ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তারা এই পদক্ষেপকে 'আইনিভাবে ত্রুটিপূর্ণ' এবং 'রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর' বলে অভিহিত করেছে। তারা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধার অভাব নির্দেশ করে।

ইরানের এই পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটির দীর্ঘদিনের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। অন্যদিকে, ইরান বরাবরই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কথা বলে আসছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো পরিকল্পনা নেই বলে দাবি করে। তবে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বর্তমান মাত্রা এবং কঠোর পরিদর্শনের অভাব এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই কূটনৈতিক অচলাবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উৎসসমূহ

  • Deutsche Welle

  • Reuters

  • Reuters

  • Reuters

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।