২০২৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, লোহিত সাগরে অবস্থিত একাধিক সাবমেরিন যোগাযোগ কেবল বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনায় এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলি এই বিভ্রাটের শিকার হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল পরিকাঠামোর ভঙ্গুরতা এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার গভীর প্রভাবকে তুলে ধরেছে।
এই ঘটনাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ ৪ (SMW4) এবং ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ (IMEWE) কেবল সিস্টেমকে প্রভাবিত করেছে, যা জেদ্দার কাছে অবস্থিত। এই সাবমেরিন কেবলগুলি এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে ডেটা চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি সংস্থাগুলি তাদের ক্লাউড পরিষেবাগুলিতে (Azure) বর্ধিত লেটেন্সি (latency) লক্ষ্য করেছে এবং বিকল্প রুটের মাধ্যমে ট্র্যাফিক পুনঃনির্দেশিত করতে বাধ্য হয়েছে, যা পরিষেবার গতি কমিয়ে দিয়েছে।
এই বিভ্রাটের ফলে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট পরিকাঠামোর উপর নির্ভরশীলতা এবং এর সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে সামনে এসেছে। এই ধরনের সাবমেরিন কেবলগুলি জাহাজ নোঙর করা বা ইচ্ছাকৃত আক্রমণের মতো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মেরামতের কাজ সাধারণত বিশেষায়িত জাহাজ এবং সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়, যা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
এই ঘটনার পর, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা, যারা পূর্বেও এই ধরনের কার্যকলাপের জন্য অভিযুক্ত হয়েছে, তাদের উপর সন্দেহের তীর উঠেছে। যদিও তারা পূর্বে এই ধরনের হামলার দায় অস্বীকার করেছে, তবে এই ঘটনা তাদের আঞ্চলিক প্রভাবের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লোহিত সাগর অঞ্চলটি বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যেখানে একাধিক প্রধান কেবল সিস্টেম অবস্থিত। এই ধরনের ঘটনাগুলি কেবল প্রযুক্তিগত সমস্যাই নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতারও প্রতিফলন ঘটায়।
এই বিভ্রাটগুলি বিশ্ব অর্থনীতি ও যোগাযোগের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এই কেবলগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আর্থিক লেনদেন এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য অপরিহার্য। এই পরিস্থিতি আমাদের ডিজিটাল বিশ্বকে সুরক্ষিত রাখার জন্য পরিকাঠামোগত স্থিতিস্থাপকতা এবং বিকল্প রুটের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছে।